ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৫৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন বর্তমান প্রশাসনের অনেক বড় সাফল্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর এ ধরনের মেগা প্রকল্প অনুমোদন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৭টি প্রকল্পের অধীনে সর্বমোট ১৬৮ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের যুগোপযোগী বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে চলতি বছরের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেন। যা বর্তমান প্রশাসনের অনেক বড় সাফল্য বলে বিভিন্ন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর এ মেগা প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে এক অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রান্তিক জনপদে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অবস্থানগত কারনে নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আছে ইবি পরিবার। বিভিন্ন দিক দিয়ে অবহেলিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নে অতীতের সরকার পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শুধুমাত্র গতানুগতিকভাবে উন্নয়ন হয়েছে এখানে। এমনি একটি অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী’র (ড. রাশিদ আসকারী) নেতৃত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা’র যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্বে অর্থ ও হিসাব বিভাগ কঠোর হস্তে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করায় বর্তমানে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অতীতের ঘাটতি পূরণ হতে চলেছে। বর্তমানে আর্থিক অনিয়ম নেই বললেই চলে।

বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখেন। গত ৭ জানুয়ারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সমাবর্তন এ স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। সফল সমাবর্তনের মধ্যদিয়ে বর্তমান প্রশাসন আরও শক্তি সঞ্চয় করেন। তাঁরা একের পর এক সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন। এছাড়াও স্বচ্ছতার সাথে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে দ্রুত গতিতে। ৫৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদনে ইবি পরিবারের দীর্ঘদিনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের পথ সুগম হবে। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে এ মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।

এ মেগা প্রকল্পের অধীনে ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ৫ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৩য় ও ৪র্থ ও ৫ম তলা), ৪ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৪র্থ তলা), ৬ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ৫ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যামান রবীন্দ্র-নজরুল অনুষদ ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৩য় ৪র্থ ও ৫ম তলা), ৫ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ৫ম তলা ২য় প্রশাসন ভবনের এ-ব্লকের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম তলা পর্যন্ত উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ ও বি-ব্লকের ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা শেখ রাসেল হলের বি- ব্লক নির্মান (আসন সংখ্যা ৫০০), ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা ছাত্র হল নির্মাণ (হল নং-০১ আসন সংখ্যা ১০০০), ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা ছাত্র হল বি- ব্লক নির্মান (হল নং-২ আসন সংখ্যা ১০০০), ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা ছাত্রী হল নির্মাণ (হল নং-১ আসন সংখ্যা ১০০০), ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা ছাত্রী হল নির্মাণ ( হল নং -২ আসন সংখ্যা ১০০০), ১০ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ১০ তলা শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণের আবাসিক ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত, প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক/সমমানের কর্মকর্তা), ১০ তলা ভিত্তির উপর ১০ তলা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ (প্রতিটি ইউনিট ১০০০ বর্গফুট, মোট ৩৬ টি ইউনিট), ১০ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ১০ তলা কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ (প্রতিটি ইউনিট ৬০০ বর্গফুট, ১০ম তলা পর্যন্ত, মোট ৩৬ টি ইউনিট, ৫ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ৫ তলা শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণের ২য় ডরমেটরি ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৪র্থ ও ৫ম তলা), ৩ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান চিকিৎসা কেন্দ্রে উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৩য় তলা), বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের বিদ্যমান এ-ব্লকের ৩-তলা পর্যন্ত উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ এবং বি-ব্লকের ৫ তলা ভিত্তির উপর ৫ তলা ভবন নির্মাণ, ৫ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ৫ প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর কোয়াটারের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৫ম তলা), ২ তলা ভিত্তিক উপর বিদ্যমান বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন (টিএসসিসি) এর এনেক্স ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (২য় তলা), ৫ তলা ভিত্তির উপর বিদ্যমান ৫ তলা ৮৫০ বর্গফুট আবাসিক ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম তলা), ভূমি উন্নয়ন, গভীর নলকূপ ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ ক্রয়, ২ টি ৫০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-ষ্টেশন (একটিতে ৫০০ কেভিএ জেনারেটর এবং অপরটিতে ৩০০ কেভিএ জেনারেটরসহ), রেইন ওয়াটার হারভেষ্ট প্লান্ট (উন্মুক্ত জলাশ্ময়) তৈরী, সোলার প্যানেল স্থাপন, আসবাবপত্র, ল্যাব ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, গ্লাসওয়্যার, কেমিক্যালস, ক্রীড়া সরঞ্জাম ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি, অফিস যন্ত্রপাতি, যানবাহন, পরামর্শ সম্মানী (১০তলা ও তদুর্ধ্ব ভবন সমূহের ০.৮০%), আনুষঙ্গিকসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হবে।

এ বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারের ভিশন ২০২১-২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নে অবদান রাখার জন্য ইবি প্রতিদিন নিজেকে যোগ্যতর করে গড়ে তুলবে। ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, এ মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইবি পরিবার কৃতজ্ঞ। ইবি পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। এছাড়াও প্রকল্প অনুমোদনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার পর প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে স্বাধীনতার যে বিকৃত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেই বিষয়গুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতেও পরিলক্ষিত হয়েছে। সেগুলোকে কাটিয়ে উঠে ১৯৯৬ সালে যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন তারপর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলবরে বৃদ্ধি শুরু হয়। তিনি বলেন, ৫৩৭ কোটি টাকার যে মেগা প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে এ প্রকল্পের আওতায় আমাদের পরিবহন নির্ভরশীলতা ও আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।  ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা বলেন, ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় আর্শিবাদ। আমি এজন্য রাব্বুল আলামীনের নিকট শুকরিয়া আদায় করি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ এ মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার জন্য। এটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, এ প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনে আমার দেখা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সাফল্য। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আমার ভিতরের যে মনছবি শুধুমাত্র ছবি হিসেবে ভাসছিল, আজ তা বাস্তবে রূপলাভ করতে যাচ্ছে। এর থেকে আনন্দের খবর কি হতে পারে। এ প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলে সার্থক হবে আমাদের আশা আকাঙ্খা।

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক (ভার:) এইচ. এম আলী হাসান বলেন, আমি মনেকরি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে নিতে এ মেগা প্রকল্প বড় অবদান ও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা সময়োপযোগী মেগা প্রকল্প প্রস্তুত করার প্রকল্পটি শতভাগ অনুমোদন হয়েছে। এটা আমাদের অনেক বড় সাফল্য। তিনি বলেন, এ প্রকল্প প্রণয়ন থেকে অনুমোদন পর্যন্ত আমাকে ভাইস চ্যান্সেলরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল প্রকার আন্তরিক সহযোগিতা করায় অতিদ্রুত প্রকল্পটি অনুমোদন করা সম্ভব হয়েছে।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান প্রকৌশলী (ভার:) আলিমুজ্জামান টুটুল বলেন, ডিসেম্বর মাস থেকে টেন্ডার কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশারাখি। এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি দেশের অন্যতম সেরা সৌন্দর্য্যপূর্ণ একটি ক্যাম্পাসে পরিণত হবে। কারণ বর্তমান প্রশাসন অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্দ্ধনের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

 

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে