বাংলাদেশের মত দেশ থেকে যেসব ব্রিটিশ ব্রান্ড তাদের তৈরি পোশাক নিয়ে আসে, সেই সব কোম্পানিকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দফতরের একজন মন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েন।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার তৃতীয় বার্ষিকীর প্রাক্কালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিস্টার সোয়েন বলেছেন, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর পণ্য কোথায়-কিভাবে-কোন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হচ্ছে, সেটার পূর্ণ দায়িত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ তাদের নিতে হবে।
উল্লেখ্য তিন বছর আগে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত হয় এগারোশোর বেশি শ্রমিক নিহত হয়।বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে মন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েন এই সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ঐ দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প খাতে ব্রিটিশ সরকার যে সহায়তা দেয়, তার ফলে গার্মেন্টস কারখানাগুলোর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। কারখানা নিরাপত্তা নিয়ে চাপ তৈরি হয় পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর।
ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দফতর এক কোটি আশি লক্ষ পাউন্ডের এক কর্মসূচীর অধীনে বাংলাদেশে রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন, কারখানাগুলোকে নিরাপদ করা, এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণে সহায়তা দিচ্ছে। ব্রিটেনের বৈদেশিক উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েন দাবি করছেন তাদের এই কর্মসূচির ফলে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে।
“খুশির কথা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ তহবিলে সব অর্থ জমা পড়েছে। দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রমিক আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে যাতে শ্রমিকদের আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে। প্রায় দশ লক্ষ শ্রমিককে কারখানা নিরাপত্তার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ৫৮৫ টি পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৭৫ টি পদে এর মধ্যে নিয়োগও দেয়া হয়েছে।”
ব্রিটিশ সরকার মনে করছে এসবের ফলে বাংলাদেশের কারখানাগুলো আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি নিরাপদ, তবে অনেক কাজ এখনো বাকী। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ আর নাম মাত্র মজুরিতে কাজ হয় যেসব কারখানায়, অনেক নামকরা ব্রান্ড এখনো সেসব কারখানায় তাদের পোশাক তৈরি করাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো যাতে এরকম কারখানার সঙ্গে ব্যবসা না করে, সেজন্যে ব্রিটিশ সরকার কি করতে পারে পারে?
এ প্রশ্নের উত্তরে ডেসমন্ড সোয়েন বলেন, “আমার মনে হয় ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে তাদের দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে এবং তাদের সাপ্লাই চেনের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তাদের পণ্য কোথায় কিভাবে, কি প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে তা দেখতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে যদি খারাপ কিছু ঘটে, তার জন্য কিন্তু তাদেরই সুনামের বিরাট ক্ষতি হবে।”
ইউরোপের যেসব দেশে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি করে ব্রিটেন তার একটি। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প সামনে আরও উচ্চ মূল্যের পণ্যের বাজার ধরতে পারলে এই খাতের সামনে আরও বিরাট সম্ভাবনা খুলে যাবে বলে আশা করেন মিস্টার সোয়েন।
“সত্যি কথা বলতে কি এক্ষেত্রে এখনো আরও অনেক কিছু করার আছে। কেবল যদি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের কথাই ধরি, এটি তাদের অর্থনীতির ১৪ শতাংশ। এটা বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের একটা বড় খাত, চল্লিশ লাখ মানুষ কাজ করছে এই খাতে। ভবিষ্যতে আরও উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরির দিকে যাওয়া বিপুল সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। কিন্তু এজন্যে বিনিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ দরকার।