আইন সচেতনতা নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও শরীয়াহ অনুষদের ডীন ড. রেবা মন্ডলের কলামঃ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও শরীয়াহ অনুষদ কেন্দ্র থেকে একটু দূরে থাকার কারনে আমাদের শিক্ষার্থীরা বহির্বিশ্ব থেকে একটু পিছিয়ে আছে। তারপর ও আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের ক্যরিয়ারের ব্যপারে আগ্রহী। তারা ভালো অবস্থানে পৌছানোর লক্ষ্যে অবিচল। আমাদের আইন অনুষদের তিনটি বিভাগ রয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব ল, ডিপারট্মেন্ট অব ল্যান্ড ম্যানাজমেন্ট, ডিপারট্মেন্ট অব আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ। আমি আমার সকল শিক্ষক মহোদয় শিক্ষার্থীদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করি।

আমি দেখেছি আমাদের শিক্ষার্থীদের ভেতর শুধু মাত্র আইন শেখার আগ্রহ আছে তাই নয় তারা আইনের সঠিক
ব্যবহারের প্রতিফলন বাস্তব জীবনে ঘটাতে চায়। “ল অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ভ্যলুজ ডেভলপমেন্ট সেন্টার” নামে আমার একটি সংগঠন আছে যেখানে আইন অনুষদের ছেলেমেয়েরাই নয় বরং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ছেলে মেয়েরাও এইই সংগঠনটির সাথে যুক্ত। একটু খেয়াল করলেদেখা যায় আমাদের দেশে যেসব অপরাধ সংগঠিত হয় সেগুলোর যথাযথ সময়ে আইনের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা হয় না শুধু মাত্র আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে। আমাদের এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছেলেমেয়েরা আইনি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহ আশেপাশের স্কুল কলেজগুলোতেও কাজ করে যাচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে।

আমরা যখন এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে মোটিভেশনাল স্পিসের আয়োজন করেছি তখন তাদের ভিতর আইন সম্পর্কে জানার গভীর আগ্রহ দেখেছি। অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে আমরা মতামত পেয়েছি যে আইনের সচেতনতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের দেশে সোশ্যাল মুভমেন্ট হওয়া প্রয়োজন। একটা রাষ্ট্রের সভ্যতা উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের মানুষের মুল্যবোধের চেতনার যায়গাটা স্বচ্ছ থাকাটা খুব জরুরি। আর এই মুল্যবোধের চেতনার যায়গাটা বিকশিত করতে আইন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা এবং তার সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরী।যদি মানবিক মুল্যবোধে ধস নমে তাহলে কিন্তু গোটা সভ্যতাটাই ধ্বংস হয়ে যায়।

দৈনন্দিন জীবনে আইনের ব্যবহারকে মানুষের কাছে কিভাবে আরো কাছে পৌছে দেয়া যায়, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড রেবা মন্ডল বলেন, “আমাদের আইনের ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, “ইগ্নোরেন্স অব ল ইজ নো এক্সকিউজ”। “আমি আইন জানি না এটা কোন অজুহাত নয় অর্থাৎ আমি যদি কোন অপরাধ করি কিনতু আমি আমি আইন জানি না বলে যে আমার কোন শাস্তি হবে না এরকম নয়।” এটি আইনের একটি রুল। আমার সংগঠনটি মুলত আইনের বিভিন্ন বেসিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে যেন সাধারন মানুষ এই সাধারন আইন
গুলো মানার মধ্য দিয়ে তাদের নিজেদেরকে আইনের প্রতি সচেতন করে তুলতে পারে।

আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গুলো তুলে ধরতে গিয়ে ড রেবা মন্ডল বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যম অনেক বেশি সক্রিয়। আইন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি সভা, সেমিনার সিম্পোজিয়াম গুলো তুলে ধরা হয় এবং এগুলোকে প্রচার করা হয় তাহলে জনগণআইনের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হবে। তিনি বলেন আইন কোন সাধারন বা ছোট বিষয় নয়। আইনের পরিধি অনেক বড়। একটি দেশের নাগরিকদেরকে আইন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হলে একেবারে প্রাথমিক শিক্ষার যায়গাগুলো থেকে শুরু করতে হবে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তে ছোট ছোট পরিসরে কর্মশালার আয়োজন করতে হবে । দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শুরু থেকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে এবং সচেতন করে তুলতে হবে । তবে শিক্ষা এবং সচেতন করলেই হবে না এর থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আইনের বাস্তবমুখী প্রয়োগ ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রজীবনে প্রতিফলন ঘটানো এবং চর্চা করা।

সঠিক উপায়ে আইন চর্চা প্রসঙ্গে ড। রেবা বলেন, নিজের জায়গা থেকে সৎ থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি কেননা সততা একজন ব্যক্তির মানসিক মুল্যবোধের জায়গাটাকে সুসংহত করে। অন্যদিকে আসাধুতা মুল্যবোধের নৈতিক স্খলনের সামিল। যা কিনা মানুষকে ব্যক্তি,সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইন ভঙ্গ করতে প্ররোচিত করে থাকে। নিজ নিজ জায়গা থেকে যদি কেউ সৎ চিন্তা নিয়ে কাজ করে যায় তবে উন্নতি হবেই ।

আইন সচেতনতা নিয়ে কাজ শুরু করার নেপথ্যের কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন,বর্তমান বিশ্বে আমরা এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি যেখানে নিয়ম-নীতির গুরুত্ব অনেক।  একমাত্র আইন সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আইনের সঠিক প্রয়োগই পারে আমাদের আইন সম্পর্কে মুল্যবোধের যায়গা পরিবর্তন করতে । মূলত আদর্শের এই জায়গা থেকেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।

ড. রেবা মন্ডল ।। ডীন
আইন ও শরীয়াহ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে