ভূমিকম্পের কারণে অদূর ভবিষ্যতে দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেবল রাজধানীতেই কয়েক লাখ হতাহতসহ বিপুল আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হলেও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বড় ধরণের কোনও ক্ষয়-ক্ষতি না হলেও পার্শ্ববর্তী দেশের ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে প্রায়ই কাঁপছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই মৃদু কাঁপুনিই যে এক সময় শক্তিশালী হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে কি-না, তার কি নিশ্চয়তা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির নির্মম খেয়ালে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশ’ বছর পর পর একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হবার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয় ১৭৬২ এবং ১৮৯৭ সালে। সেই হিসেবে নিকটতম বছরগুলোতে আবারো বড় ঝাঁকুনির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প সাধারণত দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ বছর পরপর আসে। সেই পটভূমিতে বাংলাদেশ ও তার আশেপাশে ভূমিকম্প অবধারিত। গত বছর ২৫ এপ্রিল নেপালে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ সরকারের কিছু কর্তাব্যক্তিরা ঢাকা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন বলে জানয়েছিলেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। ভবনগুলো ভূমিকম্পসহনীয় নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা রাজউককে সেই নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন তারা। পাশাপাশি উদ্ধারকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা বলছে, ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে কেবল ঢাকা শহরেই কেবল ধসে পড়তে পারে মোট দালান কোটার প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে হতাহত হতে পারে ২ লাখেরও বেশি নগরবাসী। এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ভূমিকম্প ভীতির কারণে প্রাণহানি কমাতে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
২০১০ সাল থেকে গত ছয় বছরে বিশ্বে ছোট-বড় প্রায় বিশটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে পাঁচটি ভূমিকম্প কেড়ে নিয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার প্রাণ। আর ধ্বংসস্থূপে পরিণত করেছে বেশ কয়েকটি শহর। বড় কোনো ক্ষতি না হলেও ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশও কেঁপে উঠেছে কয়েকবার।
কোন রকম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না বলেই থাকে না প্রস্তুতিও। আর তাই প্রকৃতির এই খেয়ালের কাছে বিজ্ঞান যেন অসহায়। গত বছর নেপালের ভূমিকম্পের সময় বেশ কয়েক দফা কেঁপেছে বাংলাদেশ।
এছাড়া চলতি বছর অন্তত তিনবার মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে গেল কয়েকবছরে ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ। তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ছয় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। আর ২০১১ সালের নয় মাত্রার ভূমিকম্প ও তার কারণে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় উনিশ হাজার মানুষ প্রান হারায়।
২০১২ সালের ১১ আগস্ট ইরানে ভূমিকম্পে নিহত হয় ৩০৬ জন। আর পুরো নেপালকে যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নয় হাজার মানুষ প্রান হারায় ২০১৫-তে। সবশেষ চলতি সপ্তাহে ইকিউডোর ও জাপানে দুই দফা ভূমিকম্পে প্রায় সাড়ে তিনশ’ মানুষ মরা যায়।