যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবী থেকে তৈরি পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পোশাক আমদানি করে, সেসব দেশের পোশাক রপ্তানিও কমেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হতো, ২০২৩ সালে এসে তা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তৈরি পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে? রপ্তানি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির পর বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রেও পড়েছে। সেখানকার নাগরিকরা পোশাক কেনার চাইতে খাবার-দাবারসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তবে বাজারটিতে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৯ হাজার ৯৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। কিন্তু পরের বছর তা নেমে আসে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি মার্কিন ডলারে। চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করে। দেশটিতে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম স্থানে আছে চীন, আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম।
উদ্যোক্তারা যা বলছেন :রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ইত্তেফাককে বলেন, করোনা মহমারির পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানে ভোক্তাদের প্রচুর অর্থ দিয়েছে। অবস্থার একটু উন্নতি হলে সেই অর্থ আবার তুলেও নিয়েছে। এতে জনগণের হাতে অর্থ কমে যায়। তারা ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ফলে সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মানুষ পোশাক কেনার চাইতে খাবার-দাবার, গাড়ির জ্বালানি প্রভৃতি খাতে বেশি পয়সা ব্যয় করেছে। মাহমুদ হাসান বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে মানুষ সাধারণত কাপড় কেনা কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লি.-এর এএমডি মহিউদ্দিন রুবেল ইত্তেফাককে বলেন, করোনা মহামারির পর এমনিতেই বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়। এর হাওয়া যুক্তরাষ্ট্রেও লাগে। সেখানকার ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেওয়ায় রপ্তানিও কমেছে। তিনি বলেন, করোনার পর পোশাক রপ্তানির যে কমতির ধারা তা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। অবশ্য চলতি ২০২৪ সালে সে ধারা থেকে বেরিয়ে রপ্তানি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিসংখ্যান: যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টসের (ওটেক্সার) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশটিতে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে চীন প্রথম অবস্থানে থাকলেও এক দশকে তাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় অর্ধেক। আর সে জায়গায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তৈরি করেছে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২২ সালে এই রপ্তানি উন্নীত হয় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অবস্থানে থাকা চীনের ২০১৪ সালে পোশাক রপ্তানি ছিল ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে; অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে, অর্থাৎ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একই সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোরও রপ্তানি বেড়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে চীনের পাশাপাশি কমেছে দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, মেক্সিকোর ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।