বাঙালির নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে অনেক সংগঠন অনুষ্ঠান বা র‍্যালির অনুমতি পায়নি৷ কেউ আবার এ জন্য অনুষ্ঠানই বাতি করেছে৷ এই কড়াকড়ির মধ্যে অন্যতম হলো বিকেল পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করা৷

ঢাকার রমনা বটমূলে নতুন বছরের ভোরে ছায়ানটের বর্ষবরণ হয়েছে যথারীতি৷ চারুকলার সামনে থেকেও মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়েছে সকালে৷ কিন্তু সবখানেই ছিল নিরপত্তার নামে ব্যাপক তল্লাশি৷ মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার সংক্ষিপ্ত করা হয়৷ চারুকলা থেকে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয় তা৷ তাছাড়া এবার মুখোশের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে কাউতে মুখোশ পড়তে দেখা যায়নি৷ বরং মুখোশ ছিল হাতে৷ ভুভুজেলা নামে এক ধরনের বাঁশির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায়, তা-ও দেখা যায়নি৷ তবে ভুভুজেলা না থাকায় স্বস্তিই ছিল, বিকট শব্দের অত্যাচার থেকে বাঁচা গেছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই ৷ এদিকে ‘রেইনবো র‌্যালি’ নামে একটি র‌্যালিকে এবার অনুমতি দেয়নি পুলিশ৷ নববর্ষের এই র‌্যালিটির চারুকলার উল্টোদিক থেকে বের হওযার কথা ছিল৷ র‌্যালিটির আয়োজন করে ‘রূপবান’ নামে সমকামীদের একটি সংগঠন৷ গত দু’বছর ধরে তারা র‌্যালি করলেও এবার তারা অনুমতি পায়নি৷ তবে এ নিয়ে তাদের ফেসবুক পেজে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি৷ এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷

যালি সম্পর্কে ‘রূপবান’-এর ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা যে কারণে, রংধনু যাত্রাও ঠিক একই কারণে৷ বৈশাখের প্রথম দিবসে বন্ধুত্ব ও বৈচিত্র্য উদযাপন৷ এর উদ্দেশ্য একটাই – বাংলাদেশে বিরাজমান বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলা, রংধনু রঙে৷’

এবার কয়েকটি ইসলমি দল আগে থেকেই বাংলা নববর্ষের এ সব অনুষ্ঠানকে ইসলাম বিরোধী এবং হিন্দু সংস্কৃতি অখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল৷ তারা নববর্ষে নারীদের বাইরে বের না হয়ে ঘরে থাকারও আহ্বান জানায়৷ কিন্তু তাদের হুমকি এবং নিরপত্তার কড়াকড়ির মধ্যেও রাজধানীতে নববর্ষের উচ্ছ্বাসে তেমন কোনো ঘাটতি দেখা যায়ানি৷ শুধু বিকেলের পর কোনো অনুষ্ঠান হতে দেয় না পুলিশ৷ বাংলাদেশের সবগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট – সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট৷ সাধারণত বাংলা বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান তারা করে থাকে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে৷ এই অনুষ্ঠান বিকেল চারটায় শুরু হয়ে চলে গভীর রাত পর্যন্ত ৷ জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের কাছে আবেদন করেও বিকেল পাঁচটার পর আর অনুষ্ঠান করার অনুমতি পাইনি৷ তাই আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের এই অনুষ্ঠানটি এবার করছি না, বাতিল করেছি৷” তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কাছে হয়ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো তথ্য আছে৷ কিন্তু আমরা সেটা জানি না৷ আমাদের জানানো হয়নি৷ তবে নিরপত্তার অজুহাতে উৎসবের দিনে মানুষকে ঘরে আটকে রাখার কোনো মানে হয় না৷”

তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা নববর্ষ নিয়ে মৌলবাদী-চরমপন্থিদের হুমকি পাকিস্তান আমল থেকেই আছে৷ কিন্তু তাই বলে কি আমরা থেমে আছি, থেমে থাকব!”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে