সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই বলে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি আরও বলেন, তার এ বক্তব্য শপথ ভঙ্গের শামিল এবং রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা- সেটা নিয়ে সরকার আলোচনা করবে। সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং উনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। উনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে উনার (রাষ্ট্রপতি) কাছ থেকে আপিল বিভাগের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে? এটার প্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং অন্য বিচারপতিরা মিলে ১০৬ এর অধীনে একটা মতামত প্রদান করেন রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। সেটার প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান অদ্ভুত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন…। তারপর অন্যান্য কথা। এই রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সই আছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ‘এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর প্রেক্ষিতে যে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটা নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠাই। রাষ্ট্রপতি এই অভিমতটা দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘একের পর এক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত উনি পুরো জাতির কাছে নিশ্চিত এবং পুনর্বার নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রায় আড়াই মাস পরে যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়, ওনার শপথ লঙ্ঘন হয়। এ পদে থাকার আর ওনার যোগ্যতা আছে কিনা, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে আপনার যদি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি থাকতে পারেন কি না সে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সংবিধানে রয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এত কিছুর পর উনি (রাষ্ট্রপতি) এটা কীভাবে বলতে পারেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। উনি যদি এই বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না সেটা, আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘জাতির সামনে বলা কথা নিয়ে যদি বিতর্ক সৃষ্টি করেন, সেটা তো অসদাচরণের পর্যায়ে পড়ে। তখন এই প্রশ্ন আসে আপনার মানসিক সক্ষমতা আছে কি না রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে- এ প্রশ্নগুলো আসার সুযোগ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখি পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তিরা যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ-আয়োজন করছে, তখন হঠাৎ করে তিনি আড়াই মাস পর এমন কথা কেন বললেন সেটা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। এর আগে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। সাক্ষাৎকারটি শনিবার পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এ প্রকাশিত হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে