বৈষম্যহীন শিশু অধিকার আদায়ের তাগিদ দিয়ে আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন কচি কন্ঠের আসর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস, জাতিসংঘের আঞ্চলিক অফিস, ইউনিসেফ ও আমেরিকার দূতাবাসে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে।

‘বিশ্ব শিশু দিবস এবং বিশ্ব শিশু সপ্তাহ ২০২৪’ উপলক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহজুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতে গিয়ে আজ ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করলো সংগঠনটি।কচি কণ্ঠের আসরের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল মো. কাইয়ুম খান স্মারকলিপি দেওয়ার আগে সংগঠনটির কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশসহ পৃথিবির সকল দেশেই শিশুরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষকরে, যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশগুলোতে শিশুরা বহু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুৎথানে অনেক শিশুর আহত ও মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও ফিলিস্তিন-ইজারাইল-ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে শিশুদের বিভিন্নভাবে নির্যাতনের কথা বিশ্ব অবগত।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা হেমায়েত হোসেনের বলেন, ‘বাংলাদেশসহ পৃথিবির বিভিন্ন দেশে এখনও শিশুরা তাদের ন্যায্য ও মৌলিক অধিকার পায়না। এমনকি মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়। পথশিশুরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা পায়না বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সকালে ইউনিসেফ র‌্যালি ও রোড মার্চ সহকারে শিশু প্রতিনিধি একটি দল তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করে। এরপর সকাল ১১ টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শিশুদের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এরপর দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজের পর জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।এর আগে বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহত শিশুদের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

স্মারকলিপি প্রদানকালে দেশের বিভিন্ন বাংলা মিডিয়াম স্কুল, ইংরেজী মিডিয়াম স্কুল, অটিষ্টিক স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্কুলগুলোর হচ্ছে- ইউসেপ স্কুল, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, মাস্তুল স্কুল, কড়াইল স্লাম পথশিশু স্কুল, একাডেমিয়া, মনিপুর স্কুল (আদিবাসী ছাত্র), আল আমীন হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিম খানা এবং ম্যাপেলিফ স্কুল সহ আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সময় তারা তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করে। সেই সঙ্গে তাদের হাতে শোভা পাচ্ছিল ‘রাস্ত্র-সংস্কার দিচ্ছে ডাক-শিশু শ্রম নিপাত যাক’, ‘শিশুর জন্য সংস্কার-শিক্ষার অধিকার’, ‘গাজা বাঁচাও ইউক্রেন বাচাও যুদ্ধ থামাও’ শীর্ষক বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলা এই সংগঠন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। এই বছর কচি কন্ঠের আসর তার ৪৮ বছরের কার্যক্রম উদযাপন করছে, যা শিশুদের উন্নয়নে একটি মাইলফলক। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামমিট ফর চিল্ড্রেন – এ বাংলাদেশ থেকে একমাত্র শিশু সংগঠন কচি কন্ঠের আসর অংশগ্রহণ করে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট শিশু সংগঠক হেমায়েত হোসেনের নেতৃত্বে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিশ্ব শিশুদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

‘বিশ্ব শিশু দিবস এবং বিশ্ব শিশু সপ্তাহ ২০২৪’ উপলক্ষ্যে কচি কন্ঠের আসর সপ্তাহব্যাপী আনন্দ র‌্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংবাদ সম্মেলন, শিশুদের মাঝে উন্নতমানের খাদ্য বিতরন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় মুকসুদপুরের সূরুপি সালিনা বকসা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৫ হাজারেরও বেশি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। এতে সহযোগীতা করে ‘কচি কন্ঠের আসর ইউএসএ’ এবং ‘চিলড্রেনস ভয়েস’।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে