আহসান হাবিবঃ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, “একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা ২০২৪।” ২০২৪ সালের জুলাই- আগষ্ট জুড়ে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তা একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে শান্ত ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়। শেখ হাসিনার শাসন না দেখলে এ কথা বিশ্বাস করার উপযুক্ত ছিল না। এখন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গত ১৫ই আগষ্টে শেখ হাসিনা মায়ার কান্নায় কান্না করে গেলেন।

শেখ হাসিনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক আরো বলেন, আপনার ভাইয়ের রক্তের দাম আছে, এদেশের হাজারো মজলুম ভাই ও বোনের রক্তের দাম নাই। আপনার কাছে যদি ৩০ হাজার তাগরা যুবক ও দামাল ছেলের জীবনের ও রক্তের দাম না থাকে, এদেশের মানুষের কাছে আপনার বাপ-ভাইয়ের রক্তের কোন দাম থাকবে না। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার সময় পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পঞ্চগড়ে জেলা শাখার আয়োজনে গণ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। এসময় জেলার বিভিন্ন ইসলামীক দলের নেতাকর্মীসহ প্রায় ১০ হাজারের অধীক মুসল্লী সমাবেশে উপস্থিত হন। আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, ২০১৩ সালের ৫ই মে আল্লাহর নবীর ইজ্জতের হেয়াযতের দাবি করতে গিয়ে হেফাযতে ইসলামের নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরে জমায়তে হয়েছিল। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সকল আলো নিভিয়ে দিয়ে, ঘুমন্ত- তাহাজ্জুত রত নেতাকর্মীদেরকে ঠান্ডা মাথায় গুলে করে গণহত্যা চালিয়েছিল। এর পর নানা নাটকিয়তার পর বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভিনদেশী রাষ্ট্রের আশির্বাদে এবং তাদের সমর্থন নিয়ে বাংলার ক্ষমতার মসলতকে জোর করে দখল করে থাকার জন্য শেখ হাসিনা সরকার গুম-খুন ও হত্যা চালিয়েছিল।

২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রাককালে হেফাযতে ইসলামসহ দেশপ্রেমী জনতা গুজরাটের কষাই খ্যাত ভারতের নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশে এনে এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মার রক্ত নিয়ে উপহাস না করার জন্য শেখ হাসিনা অনুরোধ জানিয়েছিল। বিনিময়ে শান্তি প্রিয় প্রতিবাদে, শেখ হাসিনার খুনি সরকার মাথায় গুলি করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। ২০২৪ সালের জুলাই- আগষ্ট জুড়ে একই কাজ করেছে, যা শেখ হাসিনার শাসন আমল না দেখলে তা বিশ্বাস করার যেত না। আরো বলেন, শেখ হাসিনার পেছনের শক্তি যারা, তারা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে জোর পূর্বক ক্ষমতার মসনদে আসিন করেছিল। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মুকাবেলা করে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছিল, পাশ্ববর্তী একটি রাষ্ট্র। শেখ হাসিনা চলে গেলেও তার প্রেতাত্মারা তার দোসররা এখনো বসে নেই। তারা সুযোগ খুজছে। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারবে। কিভাবে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শৃষ্টি করা যায়। এজন্য সকল ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সতর্ক থাকার আহব্বান জানাচ্ছি। আমাদের সকল মতাদর্শের উদ্ধে উঠে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য দীর্ঘদিন ধরে রাখতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়লে আত্মঘাতী হবে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দিনকে প্রতিষ্টা করা, বিজয়ী করা। আমরা ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শেষে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আহমদীয়া সম্প্রদায় কর্তৃক পঞ্চগড়ের মানুষের এবং আমার ভাইদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে আগামী এক মাসের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচীর হুঁশিয়াড়ি ছুড়ে দেন আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক। এসময় খেলাফত মজলিস পঞ্চগড়ে জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মীর মোর্শেদ তুহিনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব জালালুদ্দিন, মাহবুবুল হক, সদস্য সচিব আবু সাইদ নোমান, বায়তুল মাল সম্পাদক ফজলুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা শাখার আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মো আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে