চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের অন্তত ১১৪টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা অনুযায়ী ৫৪টি কারখানা, যার মধ্যে ৫১টি সাভার-আশুলিয়ায় এবং ৩টি গাজীপুর এলাকায় বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ সূত্র।

বিজিএমইএ সূত্র আরও জানায়, সারাদেশে খোলা কারখানার সংখ্যা ২,০২৮টি এবং কারখানা খোলার রাখা সত্ত্বেও কাজ বন্ধ রয়েছে ২টিতে। এছাড়া এসব এলাকায় স্ব-বেতনে (লিভ উইথ পে) ছুটি রয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা ৬০টি। ১,৩০৯ কারখানা (৬১.০৫ শতাংশ) শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করে। এর আগে, সকালে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম টিবিএসকে নিশ্চিত করেন, আশুলিয়া অঞ্চলে মোট ২২টি গ্রুপ/কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারখানা খোলা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকরা কাজ না করায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৮টিতে। তিনি বলেন, “শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা নেই। যারা পারছেন, কারখানা চালাচ্ছেন; যারা পারছেন না, ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন। শিল্প পুলিশ এবং শিল্প সূত্র জানায়, আশুলিয়া অঞ্চলে ১৩(১) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো মূলত বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকার উভয়পাশে, জিরাবো টু বিশমাইল সড়ক এবং কাঠগড়া অঞ্চলে অবস্থিত।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বে-আইনী ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না। আশুলিয়া অঞ্চলের একাধিক শ্রমিক জানান, সকালে তারা কারখানাগুলোতে গিয়ে কারখানার সামনে বন্ধের নোটিশ পেয়ে ফিরে আসে। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো পূর্বতথ্য ছিল না। পোশাক খাতের একটি শিল্প গ্রুপের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, “বিকল্প আর কোনো পথ খোলা ছিল না মালিকপক্ষের সামনে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে কারখানা চালু রাখার। কিন্তু পরিশেষে শিল্পের সাধারণ নিরীহ শ্রমিক ও সম্পদ রক্ষায় গতকাল মালিকপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

শিল্প সংশ্লিষ্টদের একটি সূত্র জানায়, শ্রমিক অসন্তোষ শুরুর পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে অনেক মালিকই ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধের দাবি তুলেছিলেন। বিজিএমইএ’র সভায়ও সেই দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে শ্রমিকদের এবং শিল্পের স্বার্থ চিন্তা করেই সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। গতকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর বিভিন্ন গ্রুপ/কারখানার মালিকপক্ষ নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

অন্যদিকে, বকেয়া বেতন–ভাতা এবং বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের চক্রবর্তী এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকরা। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ওই অঞ্চলে আশেপাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষও তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কটির উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে