জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতাঃ  বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও দুই দেশের মধ্যে চলাচল বৃদ্ধির জন্য পাঁচ বছর আগে গ্রহণ করা আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন সড়ক প্রকল্পটি। নানাবিধ  অচলাবস্থা নিরসনে খরচ ও সময় বাড়ানো হয়েছে বারবার।  সাবেক সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পূর্বনির্ধারিত খরচ ও বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি করে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালের প্রথম দিকে সরকারের অনুমোদন লাভ করার পর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আফকনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও প্রকল্পটির নির্ধারিত সময় ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ করা যায়নি। সে সময়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
উপসচিব শাহেদুর রহমান বলেছিলেন, একনেক সভায়(২২ফেব্রুয়ারী -২০২২) আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নতকরণ প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেছিলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ককে এক লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৫ সাল করা হয়েছে।   সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে। ভারত ও এই সাত রাজ্যের প্রায় মাঝখানে বাংলাদেশ অবস্থিত।
তবে, চিকেন-নেক বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি করিডোর নামক সংকীর্ণ ভূমি দিয়ে ভারতের সাথে সেভেন সিস্টার্স সংযুক্ত। ভারত-চীন দ্বন্দ্বের কারণে ভারতীয় কৌশলবিদরা এই করিডোরকে নিরাপদ মনে করেন না। এ জন্যই ভারত- বাংলাদেশ এই প্রকল্পের কথা চিন্তা করেন। তাঁদের মতে, চীন এই করিডোর বন্ধ করে সাত রাজ্যকে দিল্লি থেকে আলাদা করতে পারে। বাণিজ্যিকভাবেও এই সাত রাজ্যে ভারতীয় পণ্য ও সামরিক সরঞ্জামাদি পৌঁছানো কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। সেকারণে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করে খুব দ্রুতই ভারতীয় পণ্য পৌঁছাতে বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট সুবিধা দাবি করে আসছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বাংলাদেশি পণ্য এই সাত রাজ্যে সস্তা। এটি বাংলাদেশি পণ্যের একটি ভালো বাজারও বটে। ২০১১ সালে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তবে আশুগঞ্জ-আখাউড়া এক লেনের সড়কটি ট্রানজিট সুবিধার উপযুক্ত নয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভারত সরকারের ঘোষিত দুই বিলিয়ন ডলার ঋণের আওতায় যে কয়টি প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন সড়ক প্রকল্প অন্যতম। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে গৃহীত হয় এবং ওই বছরই সরকারের অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় এপ্রিল ২০১৭ থেকে জুন ২০২১। প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয় প্রায় তিন হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ভারতীয় কোম্পানি
অ্যাফকনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পরও প্রকল্পটির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) একনেক সভায় এই প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ৭৯২ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়।সভার প্রকল্পের কার্যবিবরনীতে দেখা যায়, মোট অর্থের মধ্যে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ হিসাবে আসবে প্রায় দুই হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে প্রায় দুই হাজার ৮০৯ কোটি টাকা।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন সড়ক প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক খালেদ শাহেদ প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরীর কারন হিসেবে  বলেন, ভারতীয় ঋণের আওতায় সড়ক বিভাগ এর আগে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি; এটিই প্রথম প্রকল্প। সেকারণে এটি বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি আরো বলেন, “আমরা এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ রেখেছিলাম ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের নতুন ভূমি অধিগ্রহণ নীতিমালা বাস্তবায়নের কারণে সেই অর্থ দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব হচ্ছিল না। সেকারণে আমাদের প্রকল্পের জন্য বাড়তি ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। সেজন্য প্রকল্প সংশোধন করতে হয়।”
খালেদ শাহেদ বলেন, প্রকল্পের ধীরগতির আরেকটি কারণ হলো করোনাভাইরাস মহামারি। এ ছাড়া, প্রকল্পের মালামালের বিপরীতে শুল্ক পরিশোধ করা নিয়ে ও সমস্যা দেখা দেয়।
সে সময়ের বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের সভাপতি রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির( ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২) প্রকল্পের লাভ  সম্পর্কে বলেন, “ভারতের জন্য আশুগঞ্জ নদীবন্দর-আখাউড়া সড়ক প্রকল্পটি বাণিজ্যিক এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কলকাতা বন্দর থেকে ভারতীয় পণ্য নদীপথে সরাসরি আশুগঞ্জ নদীবন্দরে এনে সেখান থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ভারতের আগরতলা। তিনি বলেন, এই সড়ক ব্যবহার করে ভারত সহজেই বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে যেতে পারবে এবং সেখানে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, তবে বাংলাদেশের জন্য এটি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়; এখানে কৌশলগত কোনো বিষয় জড়িত নেই। হয়তো আমাদের ব্যবসা
বাণিজ্যও কিছুটা বাড়বে। তবেএতে করে  ভারত বেশি লাভবান হবে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, “এই সড়ক চার লেন করা হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্প থেকে যে শুধু ভারতই লাভবান হবে তা নয়। বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য ভারতের সাত রাজ্যে রপ্তানি করা হয় এবং ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির শতকরা ১০ ভাগ আসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে।
দেশব্যাপী আপামর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।
২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে। তবে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। পরবর্তীতে ২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় এ পর্যন্ত তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ।
বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৫ সালের জুন মাসে।
অবশ্য চলতি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। এখন মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের কিছু সেতু, বক্স কালভার্ট ও মাটি ফেলার কাজ চলছে।
আশুগঞ্জ নদীবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. খালেদ শাহিদ বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য ঠিকাদারদের কাজে সমস্যা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজের ৩০ শতাংশের বেশি অগ্রগতি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বর্ধিত মেয়াদে কাজ শেষ করার জন্য।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার এই প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে
একবার সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা দেবে সরকার। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। যদিও চলতি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ঋণপুষ্ট প্রকল্পের নিয়ম হলো ভারতীয় ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হয় এবং ভৌত প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা সে দেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার তাদের সব ভারতীয় কর্মীকে প্রকল্প এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তাদের নিজ দেশ ভারতে নিয়ে যায়। বেশির ভাগ কর্মী আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান বলে জানা গেছে। এখনো তাঁরা কাজে যোগ দেননি।এমনিতেই বেশ ধীর গতিতে চলছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের কাজ। বার বার নানা অজুহাতে সময় ও বাড়ানো হয়েছিল। শত তাগিদের পরও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনী ভারতীয় দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফকন
ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।  এদিকে অর্ধসমাপ্ত কাজের জন্য জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। মহাসড়কের এক পাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে যানচালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। চলমান এই মহাসড়কের একপাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে যানচালক ও যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। জেলা শহরের দক্ষিণ বটতলা এলাকার বাসিন্দা মো. আল আমিন বলেন, খানাখন্দ সড়কের কারণে প্রতিদিনই ঘাটুরা-বিরাশার, পৈরতলা পুরিয়ট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা।
পরিবহন চালক রহিম  মিয়া জানান, নির্মাণাধীন সড়কটি দিয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে অনেকেই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কট যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। দ্রুত সড়কটি মেরামত করা প্রয়োজন।
আখাউড়া-আশুগঞ্জ চারলেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, ‘আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেই ঠিকাদার ছিলেন ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের। দেশে চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই ভারতে ফিরে গিয়েছেন। তারা কবে আসবেন এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি তারা। চলমান দুইটি প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ ভারতীয় লোক কাজ করছিলেন। বর্তমানে তাদের মধ্যে একজনও বাংলাদেশে নেই।’ প্রকল্প ব্যবস্থাপক আরও বলেন, ‘গত পাঁচ আগস্ট  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে  শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর  নির্মাণাধীন সড়কটির ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ৩৬০ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক চলে গেছেন। এরপর প্রকল্পের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা চুরি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়েও পেরে উঠছি না। তাই এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’ আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার চারলেন প্রকল্পটিতে একটি উড়াল সেতুসহ ১৬টি ব্রিজ কালভার্ট রয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।
অপরদিকে  এক মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় মাঠের পরিস্থিতি জানতে শিগগিরই প্রকল্পটি পরিদর্শনের পরিকল্পনা করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। ইতিমধ্যে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়নের কী সমস্যা, তা জানার জন্য পরিদর্শন করা হবে। পরিদর্শনের পর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ভারতীয় ঋণের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি যত প্রকল্প প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই–বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ভারতীয় তিনটি এলওসির চলমান এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোও মূল্যায়ন করা হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এলওসির আওতায় চলমান ও প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগ ভারতীয় স্বার্থেই নেওয়া হয়েছে। যেমন আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চার লেনের সড়ক প্রকল্পটি ট্রানজিটের আওতায় ভারতীয় পণ্য আনা–নেওয়াতেই বেশি কাজে লাগবে।
ভারত ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি এলওসিতে বাংলাদেশকে মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পরও কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থছাড় হয়নি। সর্বশেষ হিসাবে সব মিলিয়ে ছাড় হয়েছে মাত্র ১৮০ কোটি ডলার।
তিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত ৩৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে। চলমান আছে আটটি প্রকল্প। বাকি প্রকল্পগুলো পরামর্শক ও ঠিকাদার
নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক। বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে