নববর্ষকে বরণ করতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে থেকে বের করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হয় বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক৷ তা ফুটিয়ে তোলা হয় চিত্র, মুখোশ আর প্রতীকে৷ প্রতি বছরই এই মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি মূলভাব থাকে৷ সেই মূলভাব প্রতিবাদের, ভালোবাসার এবং দ্রোহের৷ সেখানে অশুভের বিনাশ কামনা করা হয়৷ প্রার্থনা হয় সত্য এবং সুন্দরের জন্য৷
এই মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ১লা বৈশাখে যশোরে৷ তখন ছিল দেশে সামরিক স্বৈরশাসন৷ উদ্দেশ্য ছিল দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে এক করা৷ এক যাত্রায় নিয়ে আসা৷ আর সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভ শক্তির আগমনের প্রার্থনা করা৷ এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারু শিল্পী মাহবুব জামাল শামিম৷ তিনি ঢাকার চারুকলা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যশোরেই চারু পিঠ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন তখন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ১লা বৈশাখে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল দুটি৷ দেশের লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরা৷ আর তার মাধ্যমে সবাইকে সত্য এবং সুন্দরের পথে আহ্বান করা৷ তাই তাদের শোভাযাত্রায় স্থান পায় নানা ধরনের চিত্র, হাতে বানানো পাখা, ঘোড়া, হাতি, ঢোল, বাঁশি প্রভৃতি৷ শোভাযাত্রাটি থাকে নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ।
চারদিকে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস-উল্লাস। প্রাণের উৎসবে মেতেছে বাঙালি জাতি। দেশের কোথাও আয়োজনের কমতি নেই। অকল্যাণ আর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল সবার মুখে মুখে। যে অগ্রযাত্রার পথে রয়েছে দেশ সেই যাত্রায় সফলতার অঙ্গীকারও ছিল নতুন বছরের শুরুতে। বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার পরে এই শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। মঙ্গলশোভাযাত্রায় চারুকলার শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে।
মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় বানানো হয়েছে মা-সন্তান, হরিণ, ষাড় ও পাখির, হাতি কাঠামো স্থান পেয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির পশু-পাখি ও মুখোশ রয়েছে। সব সংকীর্ণতা ভুলে এক নতুন বাংলাদেশ, নতুন চেতনার বারতাই ছিলো সবার মুখে মুখে। ঢাক, ঢোল আর বাদ্যের তাল। সময় নতুনকে বরন করার, পুরোনোকে পেছনে ফেলার।রাস্তা জুড়ে টেপা পুতুলের আদলে মা ও শিশুর বিশাল কাঠামো। সাম্প্রতিক সময়ে যে সামাজিক দৈন্যতার সৃষ্টি হয়েছে নতুন বছরে তার পুনরাবৃত্তি চায় না বাঙালী জাতি। বর্ণিল শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় পার হয়ে হোটেল কন্টিনেন্টালের সামনে থেকে ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হয়।