নওগাঁর সন্তান মিনহাজ আরেফিন। তিনি সরকারি উর্দ্ধতন একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন। সততা ও নৈতিকতাসহ বিভিন্ন কার্যাবলীর জন্য বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঠাকুরগাঁও জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে শুদ্ধাচার পুরষ্কার অর্জন করেছেন তিনি। তার বাড়ি নওগাঁ সদর হাসপাতাল এলাকায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রাব্বানীর বড় ছেলে তিনি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য বাহিনীর মোট ২৮৫ জন্য শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রাপ্তদের মধ্যে রংপুর রেঞ্জের একমাত্র জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে মিনহাজ আরেফিন এ সম্মাননা পেয়েছেন।তার এমন কৃতিত্বতে খুশি বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, পার্শ্ববর্তীসহ বন্ধুরা। সরেজমিনে গত বুধবার (২৬ জুন) শহরের বাসায় গিয়ে কথা হয় তার বাবা-মাসহ অনেকের সাথে।

বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। আমার আদর্শে ছেলেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সবসময় সৎ পরামর্শ দিয়েছি। বলেছি দেশের জন্য কিছু করতে। ছেলে ভালো কিছু করলে একটা পিতার জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতে পারেনা। আমরা বাবা-মা হিসেবে তার জন্য গর্বিত ও আনন্দিত। একইভাবে গর্বিত ও আনন্দিত তার বন্ধু এস এম শাকিল, প্রিন্স, সাগর, শিপলু, এস এম এমরানসহ স্থানীয়রা। তারা বলেন, প্রথমত আরেফিন আমাদের নওগাঁর সন্তান, এরপর সে আমাদের বন্ধু। তাই তার কৃতিত্বে আমাদের ভালো লাগবেই। পাশাপাশি এটা আমাদের নওগাঁবাসীর জন্য ভালো খবর। সে ভালো কিছু করলে পুরো নওগাঁ জেলার সুনাম হবে। আর সে সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করুক এটাই আমাদের চাওয়া।

মিনহাজ আরেফিন রাজশাহী কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশ পুলিশের এসআই পদে, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবেও চাকরি করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৩৪ তম বিসিএস আনসার ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পরিচালক পদে এ বাহিনীর সদর দপ্তরে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে দিনাজপুরে সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে এবং ২৩ আনসার ব্যাটালিয়ন, দীঘিনালা, খাগড়াছড়িতে ব্যাটালিয়নে উপ-অধিনায়ক ও অধিনায়ক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে জয়পুরহাট জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বশেষ গত ৩১-০৭-২০২২ তারিখে বাহিনীর ঠাকুরগাঁও জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে যোগদান করেন। আর সেখানেই চাকরি করা অবস্থায় এ সন্মান অর্জন করলেন। গত ২০ জুন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরের উপ-পরিচালক (জেনারেল) ও ফোকাল পয়েন্ট (শুদ্ধাচার কৌশল) মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক ক্রোড়পত্রে শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রাপ্তদের তালিকা ঘোষণা করেন। সততা, নৈতিকতা, উর্দ্ধতন ও অধীনস্থসহ সেবাপ্রত্যাশীদের সাথে আচার-ব্যবহার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, দেশের জন্য ভালো কিছু চিন্তা করাসহ বিভিন্ন কার্যাবলীর ভিত্তিতে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। যা একজন কর্মকর্তার জন্য বড় প্রাপ্তি এই শুদ্ধাচার পুরস্কার।

জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রাপ্তিতে অনুভূতি জানতে চাইলে মিনহাজ আরেফিন বলেন, ভালো কাজের জন্য যেকোনো প্রাপ্তিই আনন্দের। প্রতি অর্থবছরে বিভিন্ন কার্যাবলীর ওপর ভিত্তি করে শুদ্ধাচার পদক দেওয়া হয়ে থাকে। ঠাকুরগাঁও জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে আমি মনোনীত হয়েছি। এটি আমার কর্মজীবনে প্রথম একটি বড় পাওয়া। তিনি বলেন, এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমি মনে করি এ অর্জন ঠাকুরগাঁও আনসার ও ভিডিপি’র সকল পর্যায়ের সদস্যদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উজ্জীবিত করবে। এবং ভবিষ্যতে এটি আমার কর্মজীবনে আরো বেশি বেশি  অনুপ্রাণিত করবে। পাশাপাশি আমি আমার উর্দ্ধতন স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞ, উনারা আমাকে এমন একটি সন্মানে ভূষিত করেছেন। আরেফিন আরও বলেন, বাবা-মা আমার প্রেরণা। আব্বাকে দেখে তার আদর্শে বড় হয়েছি। আব্বার মতো আমারও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে। আপনারা সকলে আমার ও পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। যাতে সততা ও নৈতিকতার সাথে সেবা প্রদান করতে পারি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে