কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া সংবাদদাতা॥ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতালে প্রতিদিন আন্তঃবিভাগে রোগী ভর্তি থাকে ৬৫০ থেকে ৭৫০ জন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে দেড় হাজার মানুষ। জরুরি বিভাগেও গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোগীর ভারে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে হাসপাতালটিতে। তারপরও সীমিত জনবল, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন দেখা গেছে, রোগী গিজগিজ করছে ওয়ার্ড থেকে বারান্দা পর্যন্ত। আছে নানা ধরনের অভিযোগও। বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীর চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। মেঝেসহ খালি স্থানে পাটি ও চাদর পেতে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষ করে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০ শয্যার ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫০ জনের বেশি। হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন অন্তত ৭০০ থেকে ৮০০ জন। অতিরিক্ত রোগীর খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে রোগীর খাবার সরবরাহেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রান্নার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মাংস কাটা হচ্ছে। কীসের মাংস কাটা হচ্ছে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাগীর মাংস। খাসির মাংস না দিয়েই বিল করা হচ্ছে। অসুস্থ ছাগল দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদাররা এসব সরবরাহ করে বলে জানান রান্নার কাজে দায়িত্বরতরা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জবাইয়ের নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার বলেন, অনেক কিছুরই সংকট আছে তবুও সাধ্যমতো সেবা দিচ্ছেন তারা। রোগীর চাপ থাকায় কিছু সমস্যা হচ্ছে স্বীকার করে জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উল্টো চিত্র মেডিকেল কলেজের। জেলায় স্বাস্থ্যসেবার এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু নির্মাণ শুরুর এক যুগে শুধু একাডেমিক কার্যক্রম ও স্বল্প পরিসরে বহির্বিভাগের সেবা চালু হয়েছে। আন্তঃবিভাগ চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সমন্বয়হীনতা, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে বারবার সময় বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না কাজ। হাসপাতালের বিশাল ভবন ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ রোগীর চাপ সামাল দিতে নাজেহাল জেনারেল হাসপাতাল।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে নিচতলায় চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে রোগীদের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। তবে এক যুগ ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বারবার পিছিয়েছে নির্মাণকাজ। কয়েক বছর আগে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি বহির্বিভাগ চালু করা হয়। এরপর আরও ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি। হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে দামি যন্ত্রপাতি ও ফার্নিচার পড়ে আছে। এসব বাক্সবন্দি করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এমআরআই, আলট্রাসনো, এক্স-রেসহ অন্তত ১৩ ধরনের দামি যন্ত্রপাতি রয়েছে। এসব কেনার পর তা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে মানের যন্ত্র কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই শর্ত না মেনে কেনার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। দুদকের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বলেন, আমরা অভিযান চালিয়েছি। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক সরওয়ার জাহান জানান, হাসপাতাল চালুর বিষয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। যন্ত্রপাতি কেনায় কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি তাঁর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে