জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা।। ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিজয় মিছিলে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান এজাজকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সদ্য বহিষ্কৃত জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। শনিবার (৮ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন। হাসান আল ফারাবী জয় হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচনের দিন গত ৫ জুন সন্ধ্যায় কলেজপাড়া এলাকায় ২০/২৫ জনের সামনে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজকে পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করা হয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি হত্য মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনার পর থেকেই পুলিশ জয়কে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া কুতুবপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর হত্যাকান্ডে ব্যাবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে জন্য ভৈরব কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। পরে জেলা সদরের  ভাটপাড়া একটি ব্রিজের পাশে ঝোপের মধ্য থেকে জয়ে’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ি অস্ত্র টি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়,সে হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার  করেছে। এলাকার প্রভাব বিস্তার কে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে ফারাবী আল জয় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে ও এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে ইজাজকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও জানান, কলেজপাড়া এলাকার জালাল উদ্দিন খোকা ও হাসান আল ফারাবী জয় খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু, ইজাজ তাদের সাথেই চলাফেরা করত। এই এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করত খোকা ও জয়। ইজাজ ও তার বন্ধুরা খোকা ও জয়ের সব সিদ্ধান্ত মেন নিত না। এ কারণেই ইজাজ ও তার কয়েকজন বন্ধুর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। এই বিরোধ আস্তে আস্তে বাড়ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় খোকা, জয়সহ আরও বেশ কয়েকজন ইজাজ ও তার বন্ধুদের চরম শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী ২ জুন খোকা অস্ত্রটি সংগ্রহ করে জয়কে দেয় এবং ইজাজকে মারার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় কলেজপাড়া এলাকায় বিজয় মিছিল করা সময় খোকা, জয় ও ইজাজও এক সাথে ছিল। খোকার সাখে কোন একটা বিষয় নিয়ে ইজাজ তর্ক করার সময় জয় তার কোমড় থেকে পিস্তল বের করে ইজাজকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পুলিশ আরও জানায়, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়কে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে হাসান আল ফারাবীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে