শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর সংবাদদাতা।। প্যালেস্টাইনে দখলদার গণহত্যাকারী ইজরাইলকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কার ও যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে যশোরে সমাবেশ ও মিছিল করেছে প্যালেস্টাইন সংহতি কমিটি।বুধবার বেলা ১১ টায় যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্যালেস্টাইন সংহতি কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. ইসরারুল হক।
সমাবেশে বলা হয়, গত ৭’ই অক্টোবর থেকে ইজরাইলে সামরিক অভিযানসহ নজিরবিহীন মানবতাবিরোধী দানবিক ও নৃশংস হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গত ছয় মাসের সামরিক অভিযানে ৩২ হাজার ১৪২ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে । এর মধ্যে ১৩ হাজার শিশু এবং নিখোঁজ রয়েছে ৭ হাজার মানুষ তাদের নৃশংসতায় আহত হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অব্যাহত হত্যাযজ্ঞে প্রতিদিন আরও শত শত মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছেন।
সমাবেশে বলা হয়, গাজায় ১০ লাখ শিশু ট্রমা আক্রান্ত। এদের ৭৯ শতাংশ ট্রমা পরবর্তী অসুস্থতায় ভুগছে। পিতা, মাতা ও অভিভাবক হারানো প্রায় ১৭ হাজার শিশুকে দেখাশোনার মত পরিবারে কেউই জীবিত নেই। নির্বিচার বোমা বর্ষণে গাজায় ৬০ শতাংশের বেশি ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। পরিকল্পিত এই ধ্বংসযজ্ঞে বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ইজরাইল পরিকল্পিতভাবে সম্ভাব্য আশ্রয় কেন্দ্র, জাতিসংঘের অবকাঠামো, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সিংহভাগ হাসপাতালে ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সরকারি দফতর, মসজিদ ও গির্জা লাইব্রেরি, নাট্যশালা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও ধ্বংস করেছে। তারা নির্বিচারে হত্যা করেছে শত শত সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক- কবি, খেলোয়াড়, শিক্ষক, গবেষক শিক্ষার্থী, ত্রাণকর্মী, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মী, জাতিসংঘের উদ্বাস্তু ত্রাণ সংস্থার দফতর ও ভান্ডার এবং একাধিক বিদেশি নাগরিককে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৬ মার্চ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে তারা বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। তাদের বোমা হামলায় গাজার আল শেফা হাসপাতাল এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।নেতৃবৃন্দ বলেন, ক্রমাগতভাবে জাতিসংঘের সনদ ও সিদ্ধান্তসমূহ অমান্যকারী দেশ হিসেবে ইজরাইলের জাতিসংঘের সকল প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার ও সুযোগ নেই। তাই অনতিবিলম্বে ইজরাইলকে জাতিসংঘ চার্টারের সদস্যপদ সংক্রান্ত ধারা-৬ অনুসারে জাতিসংঘ ও তার সকল প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি , এই দাবির সাথে একাত্ম হয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করা হোক এবং গোয়েন্দা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে কোনও মাধ্যমেই ইজরাইলের উপর নির্ভর না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
সমাবেশ শেষে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল টাউন হল থেকে বেরিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে দড়াটানা মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মফিজুর রহমান রুননু, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাসদ যশোর জেলার সমন্বয়ক হাচিনুর রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মজনু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক তসলিমুর রহমান, জিল্লুর রহমান ভিটু, লেখক গবেষক বেনজীন খান, উপশহর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল, জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু প্রমুখ।