সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের নিরবচ্ছিন্ন অদম্য যাত্রা: এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ শিরোনামে টাইম ম্যাগাজিন একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গল্প দৃঢ় সংকল্প ও স্থিতিস্থাপকতার। চার বারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে এমনটা সম্ভব হয়েছে। ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় নাম এসেছিলো শেখ হাসিনার। তাঁর নেতৃত্বে বাণিজ্য বান্ধব নীতি গৃহীত হয়েছে, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগকে করেছে উন্মুক্ত।


তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে অর্থনীতির উদীয়মান তারকা

  • তিনবছর আগে যখন পৃথিবী মহামারীর ভয়াবহতায় জরাজীর্ণ ছিলো, সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনীতিগুলোও থমকে গিয়েছিলো। সেই অবস্থায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
  • ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার এই ভূমিটি দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিলো, তখনও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। কিন্তু একবিংশ শতকের শুরু থেকে বাংলাদেশ এক অসাধারণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশটি অর্থনীতির এক উদীয়মান তারকা।
  • লন্ডন ভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তথ্যমতে, ২০২২ সালে শেষ হওয়া দশকে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৯.১ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্থনীতি। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলেও সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ।
  • এমনকি ২০২১ সালে যখন মহামারী সর্বোচ্চ আকার ধারণ করেছে, তখনও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিলো ৬.৯ শতাংশ।


ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির পথে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ টেকসই প্রবৃদ্ধি দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের ৩৪ তম বৃহত্তম অর্থনীতি, যা ২০৩০ সালে ২৮ তম এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। একটি ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হওয়ার পথে আছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্যবান্ধব নীতিসমূহের মধ্যে আছে ১০০ টিরও বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট শিল্পোৎপাদনের জন্য বিশেষায়িত। সরকার বিনিয়োগকারীদেরকে আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেয়, উৎসাহিত করে রপ্তানিমুখী অর্থনৈতিক কৌশলকে। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মতে, দেশি ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুধুমাত্র কিছু আনুষ্ঠানিক পার্থক্য রয়েছে। দেশটির পথনির্দেশক নীতি হিসেবে কাজ করে সকলের জন্য সুবিধাপ্রাপ্তির সমতা ও উন্মুক্ততা।

বঙ্গোপসাগরের উত্তর প্রান্তে চমৎকার অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্প ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের ব্যস্ত শিপিং লেনকে পুঁজি করে এগিয়ে যাচ্ছে।

দেশের ঐতিহ্যগত কৃষিভিত্তিক রপ্তানি এখনও শক্তিশালীভাবে চলমান আছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ মিঠাপানির মাছ রপ্তানিতে চতুর্থ।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঔষধ শিল্প, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী উৎপাদনে তহবিল দিচ্ছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যতে বৈচিত্র্য আনছে, তৈরি হচ্ছে স্থিতিস্থাপকতা। দেশ বদলে যাচ্ছে, পরিবর্তনের গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে।

তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান বাংলাদেশ
বর্তমানে ৪৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশির বয়স ২৪ বছর বা তারচাইতে কম, আর ৭০ শতাংশের বয়স ৪০ বা তার কম। এই তারুণ্য এবং প্রাণশক্তি ইতোমধ্যেই দেশের জন্য সুফল বয়ে আনছে।

এইচএসবিসি ব্যাংক জানিয়েছে, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তা বাজারে পরিণত করছে। ব্যাংকটি পূর্বাভাস দিচ্ছে, দেশের ভোক্তা বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। স্পষ্টতই বাংলাদেশ হয়ে উঠবে পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা।

ডিজিটাল অর্থনীতিতেও বাংলাদেশের তরুণরা পরিবর্তন আনছে। বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নবম এবং অনলাইন কর্মশক্তি সরবরাহের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে ২৮ টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করেছে। ডিজিটাল জ্ঞান এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করবে মেগাপ্রকল্পসমূহ
বেশ কিছু মেগা প্রকল্প নির্মাণাধীন অথবা প্রায় সমাপ্তির পথে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, পানির নিচের টানেল ইত্যাদি।

২০৩০ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরই ১ দশমিক ১৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

বহুমুখী পদ্মাসেতু ঢাকাকে স্বল্পোন্নত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যুক্ত করবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

প্রতিবছর ২ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী এবং ৫ লক্ষ টন কার্গো ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল রাজধানীকে একটি আঞ্চলিক ট্রানজিট হাব করে তুলবে।

বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময় ও স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি নির্মাণ করতে পেরেছে যা ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাধা অতিক্রম করে ক্রমাগত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনা বাংলাদেশের মধ্যে আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে