১৯৯২ সালে ঢাকার উত্তরের ১৯৪.২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৪৭ শতাংশই ছিল সবুজ, যা ২০০২ সালে ৩১ শতাংশে, ২০১২ সালে ১৮ শতাংশে এবং ২০২২ সালে আরও কমে ১৬.১৭ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। যেকোনো শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পার্ক, খেলার মাঠ এবং শহুরে বনাঞ্চলের মতো সবুজ এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত তিন দশকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এমন সবুজ এলাকার পরিমাণ কমেছে ৬৬ শতাংশ।
১৯৯২ সালে ঢাকার উত্তর অঞ্চলে ৯২.২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল গাছপালা, যা ২০২২ সালে এসে প্রায় ৬৬ শতাংশ কমে ৩১.৪০ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। গত ৯ মে মার্কিন-ভিত্তিক জার্নাল পিএলওএস সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশনে প্রকাশিত ‘প্রোসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অফ অ্যাচিভিং সাস্টেইনেবল আরবান গ্রিন স্পেসেস: আ কেস স্টাডি অফ আরবান গ্রিনিং ইন ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি), বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা উত্তরে ধূসর এলাকা (শহুরে অঞ্চল, যেখানে গাছপালা নেই) ১৯৯২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; একই সময়ে এ অঞ্চলে জলাশয় কমেছে ৩২.৪ শতাংশ। এছাড়া, ঢাকা উত্তরে গাছ লাগানোর মতো অনুর্বর ভূমি এলাকা ২০১২ সালের প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে ২০২২ সালে ২.২ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
গবেষকরা মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের ডেটাবেস থেকে ল্যান্ডস্যাট ডেটা (পৃথিবীর উপগ্রহ চিত্র) ব্যবহার করেছেন। ঢাকার সবুজ এলাকা দিনে দিনে যেভাবে সংকুচিত হচ্ছে, ঢাকায় আর কিছুদিন পর সবুজ এলাকা থাকবেই না। ঢাকা উত্তরের তুলনায় ঢাকা দক্ষিণে সবুজ এলাকা কম। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আবাসন নির্মাণের কারণে ঢাকার সবুজ এলাকা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারি পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। এছাড়া বিদ্যমান সবুজ এলাকাগুলোকে সরকারি পদক্ষেপের মাধ্যমে রক্ষা করা জরুরী।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে ঢাকার মোট এলাকার ৪৪.৮ শতাংশ ফাঁকা জায়গা ছিল, যা ২০০৫ সালে মাত্র ২৪.৫ শতাংশে নেমে আসে। গবেষকরা ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষাকে উদ্ধৃত করেছেন; ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকা শহরের ব্যস্ততম কেন্দ্রের প্রায় ৮৮ শতাংশ এলাকাই সবুজ অঞ্চল বা জলাভূমি ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের কার্বন সিকোয়েস্টেশন (বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণ ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া) অবস্থা অসন্তোষজনক।
সমীক্ষায় কর্তৃপক্ষকে টেকসই উন্নয়নের ১১ নং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই শহর গড়ে তুলতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ‘খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক এবং জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০’ এবং ‘পাবলিক ওয়াটার বডি ম্যানেজমেন্ট পলিসি ২০০৯’- এর মতো নীতি ও আইনের মাধ্যমে জলাশয় রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। হাতিরঝিল এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পসহ সরকারের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন জলাভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ঢাকা উত্তরের প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষার কাজ চলছে।
ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউনেপ) অনুসারে, একটি আদর্শ শহরের অন্তত ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা হওয়া উচিত, কিন্তু এর বিপরীতে ঢাকা উত্তরে রয়েছে মাত্র ১৬.১৭ শতাংশ। দুই কোটিরও বেশি লোকের বসবাস ঢাকায়; গত ২০ বছরে এই শহরের তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘সারফেস আরবান হিট আইল্যান্ড ইন্টেনসিটি (এসইউএইচআইআই) ইন ফাইভ মেজর সিটিস অফ বাংলাদেশ: প্যাটার্নস, ড্রাইভারস অ্যান্ড ট্রেন্ডস’ শীর্ষক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে এ তথ্য।
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও আঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘পলিটিকাল ইকোনোমি অফ আরবান গ্রিন স্পেসেস অফ ঢাকা সিটি’ শীর্ষক আরেক গবেষণায় বলা হয়, ঢাকার মাত্র ৮.৫ শতাংশ ভূমিতে গাছপালা রয়েছে।