নতুন শিক্ষাবর্ষের কয়েকটি পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। গবেষকরা বলছেন, যারা বই লিখেন তারাই আবার সম্পাদনা করেন, আর এ কারণে অনেক ভুলই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। মুদ্রণের আগে তাই বই ভেটিংয়ে পাঠানোর পরামর্শ তাদের। অন্যদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড-এনসিটিবি বইয়ের এসব অসঙ্গতি স্বীকার করে বলছে, এপ্রিলের মধ্যে পরিমার্জন করা হবে।

২০২৩’শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে বেশকিছু ভুল ধরা পড়েছে। যেমন নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা আছে, ‘১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।’ তথ্যটি মোটেও সঠিক নয়। বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়িয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। অবশ্য এরইমধ্যে নবম-দশম শ্রেণির বই থেকে ইতিহাসভিত্তিক মোট ৯টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। আরও ভুলের সন্ধান মিলেছে ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজী বইয়েও। বেশকিছু ভুল খুঁজে পেয়েছেন মাসুম হাসান নামের একজন শিক্ষক। যাতে দেখা যায়- এই বইয়ের ৮০ পৃষ্ঠার ১ নম্বর লাইনে বলা হয়েছে has recently transferred; হবে has recently been transferred. এমন ৪৮টি ভুল খুঁজে পেয়েছেন ওই শিক্ষক।

পাঠ্যবইয়ে ভুল এবারই প্রথম নয়। এর আগেও হয়েছে। তবে এবার অল্প সময়ের মধ্যে বই তুলে দেয়ার একটা তাড়াও ছিল। এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, “আমাদের একটা তাড়া ছিল এবং সেখানটায় হয়তো কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে সেটা আমরা জানি। যেকোনো ধরনের ভুল-ত্রুটি জানালে সেটা পরবর্তীতে পরিমার্জিত করে আগামী বছর শুদ্ধ সংস্করণ দেওয়া হবে। গবেষকরা বলছেন, যারা বইয়ের রচয়িতা তারাই সম্পাদনা করছেন। ফলে ভুলটা খুব বেশি নজরে আসছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, “যারা লেখক তারা লিখবেন। সম্পাদনা পরিষদে যদি অন্যরা থাকেন তাহলে সুবিধা হয়, সেকেন্ড আইডিয়ায় দেখা হলো। এরই পাশাপাশি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আরেকটি মিটিং করা হয় তাহলে থার্ড আইডিয়ায় দেখার সুযোগ তৈরি হলো। তারপর মাঠ পর্যায়ে গেলে ভুলের পরিমাণটা কম হয়। তবে এনসিটিবি’র দাবি, বেশকিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ছাপানো হয় পাঠ্যবই।

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, পাঠ্যপুস্তকটা রচনা হওয়ার পর সম্পাদক সম্পাদনা করার পরে কিছু পর্যালোচনাকারীদের কাছে দেই। ওনারা যে জায়গায়গুলো পয়েন্টআউট করেন সেগুলো আবার ওই লেখক প্যানেলের কাছে দেই।

পাঠ্যবই ভুলের পেছনে রচয়িতা, সম্পাদক এবং পরিমার্জনকারিদের উপযুক্ত সম্মানী না দেয়াটাকেও দুষছেন গবেষকরা। অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, যদি তাদেরকে যথপোযুক্ত সম্মানি দিতে পারেন তখন তাদেরকে মোর অ্যাকাউন্টেবল করতে সক্ষম হবেন। তবে কাজটি অর্থের বিবেচনায় নয় বরং জাতীয় স্বার্থেই শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা করেন- এমন দাবি এনসিটিবি’র।

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, “নিশ্চয়ই যে সম্মানিটা আমরা দেই সেটা খুবই নগন্য। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যারা করেন তারা জাতীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটা ডেডিকেশন নিয়ে কাজ করেন। এই ডেডিকেশনটা যদি না থাকে আপনি যতো বেশি টাকা দেননা কেন সেই কাজ পাবেন না। নতুন করে যত ভুলত্রুটি ধরা পড়ছে সেগুলো আমলে নেয়া হচ্ছে। মার্চ মাসে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় শেষে এপ্রিলে চূড়ান্ত পরিমার্জন করা হবে বলে জানায় এনসিটিবি। এনসিটিবি’র সদস্য বলেন, আগামী বছর যখন ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণীর নতুন বইগুলো যাবে, তখন একটা পরিমার্জন সংস্করণ যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে