পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে এবং বাংলা নববর্ষ শুভদিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। আর আজকের দিনে সেই শুভদিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে শুধু পালিতই হচ্ছে না, প্রজাতন্ত্রের কর্মীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাতাও দেয়া হচ্ছে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে লোকজ অনুষঙ্গকে প্রাধান্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন দেশ উৎসব। এরপর জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো এই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিলে তা আরো ভিন্নতর মাত্রা পায়। আজ সারা দেশের সব সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে একে অপরের মঙ্গল কামনা করছে। বিভিন্ন স্থানে মেলা উদযাপনের মাধ্যমে বাঙালির পূর্ব ইতিহাস স্মরণ করছে। আর পরিবার, স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মেতে ওঠছে আনন্দ হৈহুল্লোড়ে। বরাবরের মতো এবারও চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রঙ-তুলির নানা কারুকার্যে লোকজ উপাদানগুলোকে সরাচিত্র, মুখোশ আর নানা অনুষঙ্গে ফুটিয়ে তোলে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল আয়োজন সাজিয়েছে।
সর্বজনের প্রাণবন্ত উৎসব হয়ে ওঠুক বাংলা নতুন বছর। প্রাণে প্রাণে বাজুক মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। সত্য ও সুন্দরকে মাখামাখি করে কল্যাণময় হোক সবার জীবন।
শুভ নববর্ষ।
রুজমিলা হক। বিডি টাইম্স নিউজ
আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ-১৪২৫। শুভ নববর্ষ। মহাকালের পথ পরিক্রমায় আরেকটি বছর গত হয়ে আবার এক নতুন সূর্যের স্বর্ণালি আভায় সেজে উঠল হাজার বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত আমাদের স্বদেশভূমি। পুরনো কথা, বিয়োগ ব্যথা আর যতসব গ্লানি ভুলে যাকিছু প্রাপ্তি, তাকে সঙ্গে করে এগিয়ে চলার মন্ত্রণা হোক আজ নতুন দিনের দীপ্ত আবাহন।
প্রচলিত বাংলা সনের সুত্রপাত মোগল আমলে। তার আগে এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। সম্রাট আকবর তাঁর নিজের সিংহাসনে আরোহনের কাল, পুরোনো বাংলা দিনপঞ্জির সৌরসন, হিজরি চান্দ্র সন এবং খ্রিস্টীয় সাল মিলিয়ে তারিখ-ই-ইলাহী ঘোষণা করেন। নতুন সনটি প্রথমে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত হলেও পরে তা বঙ্গাব্দে রূপ লাভ করে। আকবর অভেদ মানুষের মহাসম্মীলনের কথা ভেবেই হয়তো এমনটা করেছিলেন। তাঁর সময়কালে বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরের দিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষ্যে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করার রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল।