মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকালে বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। মঙ্গলবার(৪’ঠা অক্টোবর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার সময় সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে সোমবার (৩ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটে) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়িতে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ হয়। এতে ৩ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হন। নিহতরা শান্তিরক্ষীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার কাটিঙ্গা গ্রামের জসিম উদ্দিন, নীলফামারীর ডিমলা থানার দক্ষিণ টিটপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার বাড়াক রুয়া গ্রামের শরীফ হোসেন। অপরদিকে, আহতের নাম মেজর আশরাফুল হক।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় মোতায়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। দুর্গম এলাকায় মোতায়েন অন্যতম অস্থায়ী ক্যাম্প কুই হতে পরিচালিত যান্ত্রিক টহলের একটি দল মেজর আশরাফের নেতৃত্বে স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কাইতা এলাকায় টহলে যায়। ফেরার পথে (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৩৫ মিনিটে) টহল কমান্ডার মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি মাটিতে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণের কবলে পড়ে গাড়িটি প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে ছিটকে পড়ে। এতে সৈনিক শরীফ, সৈনিক জাহাঙ্গীর ও সৈনিক জসিম ছাড়াও মেজর মো. আশরাফুল হক মারাত্মক আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে ১৪৪ কিলোমিটার দূরে বোয়ারের মিনুসকা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈনিক শরীফ, সৈনিক জাহাঙ্গীর ও সৈনিক জসিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া আহত অপর শান্তিরক্ষী মেজর মো. আশরাফুল হক হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। শহীদ শান্তিরক্ষীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া মিশনে নিয়োজিত অন্যান্য শান্তিরক্ষী নিরাপদে আছেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হয়।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন এমআইএনইউএসসিএর তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার ৫০ লাখ মানুষের এ দেশটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এবং বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিকার এ দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা বিরাজ করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকার ৮টি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছে এবং জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে