চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় সফরের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিমানে নূর-সুলতানে পৌঁছেন। দুই রাষ্ট্রপ্রধান একই দিন আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকীতে যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর ও বিবৃতি প্রকাশ করেন।
দুই নেতা বংশানুক্রমিক বন্ধুত্বপূর্ণ, পারস্পরিক আস্থাশীল এবং সুখ ও দুঃখের ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলতে চীন ও কাজাখস্তান পরিশ্রম করবে বলে ঘোষণা করেন। প্রকাশিত এক লিখিত ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি চীন সরকার ও চীনা জনগণের পক্ষ থেকে কাজাখস্তানের সরকার ও জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানান। এবারের সফর অবশ্যই দু’দেশের অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে নতুন শক্তিশালী চালিকাশক্তি প্রদান করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট সি’র জন্য কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ত তোকায়েভ এক জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানের পর নেতাদ্বয় একসঙ্গে ‘কাজাখস্তান-চীন হাজার বছরের সংলাপ’ শৈল্পিক প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। এতে কাজাখস্তানের জাতীয় শৈল্পিক জাদুঘরে সংগৃহীত দু’দেশের শিল্প সম্পদ প্রদর্শিত হয়। এসব শিল্প হলো হাজার বছর ধরে দু’দেশের একে অপরের কাছ থেকে উজ্জ্বল সংস্কৃতি শিখার প্রাণবন্ত বহিঃপ্রকাশ এবং দু’দেশের জনগণের প্রজন্মের পর প্রজন্মের বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের ঐতিহাসিক সাক্ষী।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের পর আবার প্রেসিডেন্ট তোকায়েভের সঙ্গে দেখা করে আমি খুব আনন্দিত। মহামারীর পর থেকে এটি হলো আমার প্রথম সফর এবং আমি এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ থেকে চীন ও কাজাখস্তানের সম্পর্কের উচ্চ মান ও বিশেষত্ব ফুটে ওঠেছে এবং আমাদের সুগভীর মৈত্রীও প্রতিফলিত হয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও কাজাখস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৩০ বছরে দু’দেশের সম্পর্ক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। দু’দেশ প্রথমে সীমান্ত সমস্যা সমাধান করেছে। প্রথম আন্তঃদেশীয় তেল ও গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করেছে, প্রথম আন্তর্জাতিক সক্ষমতা সহযোগিতা চালিয়েছে এবং প্রথম চিরস্থায়ী সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘কাজাখস্তান হলো মধ্য এশিয়ার বড় দেশ এবং ইউরোপীয় ও এশীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী দেশ। চীন সরকার কাজাখস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার কথা পুনরায় জোর দিয়ে বলতে চাই। পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে চীন বরাবরই দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করতে কাজাখস্তানকে সমর্থন দিয়ে থাকে। দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন রক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট তোকায়েভের সংস্কারের ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। কাজাখস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যে কোনো শক্তির দৃঢ় বিরোধিতা করে চীন। চীন চিরদিন কাজাখস্তানের আস্থাযোগ্য ও নির্ভরশীল বন্ধু ও অংশীদার।’
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও কাজাখস্তানের সহযোগিতার ভিত্তি শক্তিশালী, সম্ভাবনা বিশাল এবং ভবিষ্যতও সুপ্রশস্ত। দু’দেশের যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণ, আর্থ-বাণিজ্য, আন্তঃযোগাযোগ ও মহামারী প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা বাড়ানো এবং বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সবুজ অবকাঠামোসহ নানা সৃজনশীল সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা উচিত। দু’দেশ শাংহাই সহযোগিতা সংস্থাসহ বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার কাঠামোতে সহযোগিতা জোরদার করা উচিত।
বৈঠকে তোকায়েভ প্রেসিডেন্ট সি’র নেতৃত্বে চীনের অর্জিত মহান সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের সুষ্ঠু আয়োজনের অগ্রিম অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট সি’র এবারের সফর অবশ্যই কাজাখস্তান ও চীনের সম্পর্কের উন্নয়নের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক হবে বলে তোকায়েভ বিশ্বাস করেন। একইদিন দু’দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আর্থ-বাণিজ্য, আন্তঃযোগাযোগ, জলসেচসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার দলিল স্বাক্ষর করেছে। সি আন এবং আক্তোব শহরে কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় পক্ষ। সূত্র: লিলি, সিএমজি