জহির সিকদার,ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গতবারের পাঁচ বিরোধী ও এক বিদ্রোহী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নৌকার বিরোধিতা করা এসব প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চাওয়া ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে। এছাড়াও নয়টি ইউনিয়নে নৌকার বিরোধিতা করা আরো ১৫ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামিলীগের দলীয় ঘোষণা অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনও নির্বাচনে একবার বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ওই নেতাকে আর কখনই নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না এমনকি আজীবনের জন্য দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা থাকলেও নবীনগরে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা ছয়জন ইউপি চেয়ারম্যান এবার আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জহিরউদ্দীন সিদ্দিক টিটো জানান, বিগত উপজেলা নির্বাচনে নবীনগর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ মিয়া, নবীনগর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান মৌসুমী আক্তার, শ্রীরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার হোসেন জামাল, ইব্রাহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা, রসুল্লাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর, সলিমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সরাসরি নৌকার বিরোধিতা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকার বিরোধিতা করে তাঁরা এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছে। এঁরা মূলত সুবিধাবাদী মনেপ্রাণে আওয়ামীলীগের কেউ নন। তিনি আরো বলেন, তাঁদের ব্যাপারে আমি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রে জানিয়েছি। তাঁরা যেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পায় সেজন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ধাপে এই উপজেলার ২১ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩ টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে নবীনগর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মৌসুমী আক্তার।

এছাড়াও নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ মিয়া,শ্রীরামপুরের চেয়ারম্যান আজাহার হোসেন জামাল, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা, রসুল্লাবাদের চেয়ারম্যান আলী আকবর ও সলিমগঞ্জের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা অনেকেই এবারের ইউপি নির্বাচনে লড়তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর আগে কখনোই রাজনীতিতে না থাকা মৌসুমী আক্তার এই ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান খায়ের বারীর স্ত্রী। তার স্বামী ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি মারা যাওয়ার পর তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হন।

নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নের বগডহর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, বিগত ২০১৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী প্রাথী হিসেবে নির্বাচনে লড়ে জয় ছিনিয়ে এনে তাক লাগিয়ে দিলেও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন মৌসুমি আক্তার। এলাকার উন্নয়নে ন্যূনতম ভুমিকা না রাখায় তিনি ব্যর্থ হিসেবে গণ্য হয়েছেন। তিনি এবার নৌকার মনোনয়ন ফরম কেনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি আক্তার বলেন, আমি নৌকার বিদ্রোহী হয়ে গত নির্বাচনে জয় লাভ করেছি।এবার নৌকার মনোনয়ন চেয়েছি দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। সূত্র জানায়, এবার ১৩ টি ইউনিয়ন থেকে ১০৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। এর মধ্যে ১০৪ জন তাদের মনোনয়ন ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। রসুল্লাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর নৌকার বিরোধিতা কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি যেন নৌকার মনোনয়ন না পাই সেই জন্য এলাকার কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে । এদিকে গত ১৬ অক্টোবর শনিবার বিকেলে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্যানেল তৈরির লক্ষ্যে নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে তৃণমূল নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, দলীয় মনোনয়ন ফরমের মন্তব্য কলামে প্রত্যেকের আমলনামা লিখে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্র থেকে যেহেতু দলী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হচ্ছে, সেহেতু কেন্দ্র এ বিষয়ে সিদ্বান্ত নিবে। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল বলেন, বিগত নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন কিংবা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের আমলনামা তৈরি করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। কেন্দ্র যা ভালো মনে করবে তাই করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, বিদ্রোহীসহ অন্যান্য অভিযোগ থাকা প্রার্থীদের বিষয়ে স্ব স্ব উপজেলা আওয়ামী লীগকে সিদ্বান্ত নিতে বলা হয়েছে।

ব্রাহ্মনবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।।বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে