জহির সিকদার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।। স্কুলছাত্রী ক্লাসে গেলেন সন্তান নিয়ে, শিক্ষক ক্লাস নিলেন সেই সন্তানকে কোলে নিয়ে। এই রসময় ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে।
রবিবার থেকে দশম শ্রেণি ক্লাস শুরু হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় এখন আলোচনার খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল খোলার দিন এক ছাত্রী তার নবাগত সন্তানকে নিয়ে শ্রেণি কক্ষে হাজির হয়েছেন । আর শিক্ষক সেই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস নিয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০ টা ঐ ছাত্রীর কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে পাঠদান করাচ্ছিলেন শিক্ষক পঙ্কজ মধু (৪৫)। রোববার (৩ অক্টোবর) চিনাইর অঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালের এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে। সন্তানকে কোলে নিয়ে পাঠে মনোযোগী হতে না পারায় শিক্ষার্থীর সুবিধার্থে তিনি এ কাজ করেন। পঙ্কজ মধু গোপাল গঞ্জ জেলার কোচল্লী উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের লিও মধুর ছেলে। তিনি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা শহরের দাতিয়ারা পৌর এলাকায় বসবাস করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাইরাল হওয়া পঙ্কজ মধুর কোলে শিশুটি ২০২১ সালে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রীর সন্তান।করোনার প্রাদূর্ভাবে শুরু হলে যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয় ঠিক সেই সময় ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়। তারপর ঠিক এক বছর পর তার কোল জুড়ে আসে একটি সন্তান। বিয়ের পরই যেনো বাঁধা পড়ে যায় দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর পড়ালেখায়। তবে আবার যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হয় তখন শিক্ষক পঙ্কজ মধু জানতে পারলেন দশম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে নি। পরে তিনি তার খোঁজ নিলে জানতে পারেন ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। পরে তিনি তাকে খবর দিলেন বিদ্যালয়ে আসার জন্য। রোববার (০৩ অক্টোবর) সকালে সেই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু পাঠে মনোযোগ দিতে পারছিলো না তার কোলে থাকা সন্তানের জন্য। তাই পাঠে মনোযোগের সুবিধার্থে শিক্ষার্থীর সন্তানকে কোলে নিয়ে পাঠাদান করাচ্ছিলেন তিনি। তখন কেউ একজন ছবিটি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করলে কিছু সময়ের মধ্যে ছবিটি ভাইরাল হয় পরে। শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালবাসা ও একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রতি তার দায়িত্বের দিকটি চিন্তা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসিত।এ বিষয়ে শিক্ষা পঙ্কজ মধু জানান, কবে যে ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লো তা আমার জানা নাই। আর ভাইরাল হওয়ার জন্যও আমি এই কাজটা করি নি। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার কথা আমি সব সময়ই চিন্তা করি। আমি যখন জানতে পারলাম করোনা কালীন সময়ে যখন স্কুল বন্ধ দিয়ে দিয়েছে তখন দশম শ্রেণীর একজন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। তার কারণে সে স্কুলে আসতে পারে নি সেই বিষয়টি জেনে আমার অনেক খারাপ লাগলো। তখন আমি তার সাথে যোগাযোগ করলাম এবং রোববার সে তার বর ও তাদের কোলের সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসে। তখন সেই ছাত্রী ও তার স্বামীকে আমি বুঝায় পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন সেই শিক্ষার্থী তার কোলের শিশুকে নিয়ে এসে কক্ষে বসে। কিন্তু কোলের সন্তানটির জন্য সে ভালো করে মনোযোগ দিতে পারছিলো না। তাই আমি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাচ্ছিলাম।
চিনাইর অঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়েরর এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনাটি আজ সকালে ঘটেছে, সেই স্কুলের একজন শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানায়। তারপর ফেসবুকে ছবিটি আমি পোস্ট করি। তিনি একজন ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের প্রতি রয়েছে স্যার অনেক দায়িত্ববান। মুক্তি খান নামে একজন লিখেছেন, ‘এর দায়ভার নিতে হবে ইউনিয়ন পরিষদকে। এদের সঠিক তদন্ত করা উচিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।।বিডি টাইমস নিউজ