জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়ে আখাউড়ার মাছ এখন ভারতেও যাচ্ছে। যাচ্ছে অন্যান্য দেশে।

গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় উৎপাদিত মাছের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৭২০ মেট্রিক টন। এ উপজেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৪৯৮মেট্রিক টন। আর উৎপাদিত হচ্ছে ৪ হাজার ৫২১ দশমিক ২০ মেট্রিক টন মাছ । অতিরিক্ত থাকছে ১ হাজার ২৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছ চাষের পরিধি। চাষকৃত এসব মাছের মধ্যে রয়েছে  রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাস,মৃ গেল পুটি, স্বরপুটি, কার্প, তেলাপিয়া, বোয়াল, গ্রাসকাপ, নাইলোটিকা, শিং, মাগুর, কৈসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব মাছ এলাকার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি হয়েছে ভারতেও। একই সঙ্গে আশপাশের একাধিক এলাকায়ও যাচ্ছে আখাউড়ার মাছ। প্রতিদিন ভোরে পৌর শহরের বড় বাজার মাছের আড়তে ৩০০-৩৫০ মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়। প্রতিদিন ভোর বেলায় বাজারে পাইকার, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে। স্বল্প সময়ের মধ্যে বাজারে আসা মাছ কেনা বেচা হয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা (আড়ৎদাররা) জানান। আগের চেয়ে আখাউড়ায় দিন দিন মাছের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈবর, নরসিংদী, ঢাকা, কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী, চট্রগ্রাম, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা  এসে ওইসব মাছ ক্রয় করে  নিয়ে যায়। এ জন্য দূরের পাইকাররা রাতের মধ্যেই হাজির হন মাছ কেনার জন্য। তারপর ওইসব ব্যবসায়ীরা ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান সিএনজি অটো রিকশার মাধ্যমে নিয়ে যান নিজ নিজ গন্ত্যব্যে। পাশাপাশি আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে  ভারতে ও  রফতানি হচ্ছে আখাউড়ার মাছ।

অপরদিকে কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় মৎস্য চাষ করে স্থানীয় চাষিরা এক নীরব বিল্পব ঘটিয়েছে। এ উপজেলার শত শত যুবকের অর্থনীতি উন্নয়নে মাছ চাষ যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন। সেই সঙ্গে এ চাষে পাল্টে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যের চাকাও । স্থানীয় একাধিক মৎস্য চাষি জানায়, পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, শান্তিনগর, খড়মপুর দুর্গাপুর, উপজেলার ধাতুর পহেলা, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি, টানুয়াপাড়া,হীরাপুর, বাউতলা, উমেদপুর, আজমপুর, মোগড়া,মনিয়ন্দ ধরখারসহ বিভিন্ন এলাকায় যুবকরা পুকুর হাল, বিল, জলাশয় ও ফসলি জমিতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। তাদের মধ্যে কেউ করছেন নিজস্ব পুকুরে, আবার কেউ করছেন বার্ষিক ইজারা নিয়ে সরকারী কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন, আবার কেউ মৎস্য প্রকল্পের নামে সমিতি  গঠন করেও  মৎস্য চাষ করছেন।  গত দু মাস ধরে পুরো দমে চলছে চাষকৃত মাছ বিক্রী। আর এসব মাছ বিক্রী হচ্ছে স্থানীয় আড়ৎসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকারী বাজারগুলোতে। মাছের আড়তদার মোঃ বাছির খান জানান, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষিরা তাদের উৎপাদিত বেশির ভাগ মাছ বিক্রি করতে এখানে নিয়ে আসেন। বড় বাজার এলাকায় ১৪ জন আড়তদার রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কমপক্ষে দুশতাধিক পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এখান থেকে  নিয়মিত মাছ ক্রয় করছেন। তাছাড়া এখানকার মাছ দামে অনেক কম পাওয়ার কারনে অনেকেই বিয়ে, জন্মদিন, অন্যান্য অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাছ কিনতে আসেন। শুধু তাই নয় এখানকার উৎপাদিত মাছ ভারতেও রফতানি হচ্ছে। এই বাজারে কমপক্ষে ২০থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। কুমিল্লা থেকে আসা পাইকার মো. হোসেন মিয়া বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ভোরে ৫-৬ মণের উপর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয় করে মিনি ট্রাকে করে নিয়ে তিনি নিয়মিত বিক্রি করছেন। এখানকার মাছের কদর রয়েছে বেশ ভালো। মাছ নিয়ে বাজারে বসে থাকতে হয় না।

পাইকার মো. মনির বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় দীর্ঘ চার বছর ধরে এখান থেকে মাছ ক্রয় করে বিক্রি করছি। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির ৪-৫ মণ মাছ কেনা হয়। বিক্রিতে ভালো লাভ হয় বলে জানায়।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুরুজ মিয়া বলেন, রুই,কাতল, মৃগেল পুটি, কার্প জাতীয় ছোট বড় প্রায় ৪ মণ মাছ কেনা হয়। ওই মাছগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। মৎস্য চাষী টিপু চৌধুরী বলেন, ৩টি প্রজেক্ট ও কয়েকটি  পুকুর বার্ষিক ও অর্ধ বাষিক ইজারা  নিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। তিনি মূলত শখের বসে মাছ চাষ শুরু করলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করছেন। এখন পুরোদমে মাছ বিক্রি তার শুরু হয়েছে। দৈনিক গড়ে ১০-১২ মণ মাছ বিক্রি হয়।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্ত জ্যোতি কণা দাস বলেন, এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে এক নীরব বিল্পব ঘটে চলছে। মৎস্য চাষে এলাকার শত শত যুবকদের যেমন বেকারত্ব দূর হয়েছে পাশাপাশি শতশ ত লোকের কর্মসংস্থানও  সৃষ্টি হয়েছে। মাছ চাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব সময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যে কারনে দিন দিন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সাথে ‘মাছ চাষের পরিধিও বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে আছে। এগুলো মাছ চাষের আওতায় আনা গেলে এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।।বিডি টাইমস নিউজ 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে