জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা।। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকেননা কর্তব্যরত ষ্টাফ। নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি জরুরী সেবা দিতে চলে যান অন্য কোন হাসপাতালে। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৩০লক্ষ মানুষের জন্য সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র ২৫০শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে।

উল্লেখ্য যে, এই হাসপাতালে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহিঃবিভাগের চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে এই হাসপাতালটি ২৪ঘন্টা খোলা থাকে। সেখানে রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসক ও স্টাফরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। জরুরী বিভাগে তিন ধাপে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা, দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা ও রাত ৮ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রোস্টার অনুযায়ী স্টাফরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সেই অনুযায়ী জরুরী বিভাগের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্ব ও পালন করা হয়। করোনা ভাইরাসের মহামারীতেও স্টাফরা ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের কতিপয় স্টাফ তাদের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে সরকারি হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা দিয়ে থাকেন। এর ফলে জরুরি বিভাগে আসা রোগীরা  চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।

বৃহস্পতিবার (২০আগস্ট) রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের টিকেট কাউন্টার ও সেবা প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র স্টাফ নার্স সাদেক খান ও ওয়াজিদুল ইসলাম তুষার। কিন্তু রাত পৌনে ৯টা থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান সাদেক খান। এরই মাঝে জরুরি বিভাগে কয়েকজন যুবক একজন অসুস্থ  রোগীকে নিয়ে আসেন জরুরি সেবা নিতে।কিন্তু  সাদেক খানের দেখা না পাওয়ায় ওই রোগীকে টিকেট ও চিকিৎসা সেবা দিতে হয়েছে অপর স্টাফ নার্স তুষার ও হাসপাতালের দারোয়ান আরিফ খান কে। তার প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর সাদেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন।

বৃহস্পতিবার (২০আগস্ট) রাত ৯টা ২১মিনিটে সাদেকের সহকর্মী ওয়াজিদুল ইসলাম তুষার জানান, আমি আর সাদেক সঠিক সময়ে ডিউটিতে এসেছি। কিন্তু সাদেক কোথায় আছে বলতে পারব না। রাত পৌনে ৯টার দিকে সে বের হয়ে গেছে।কোথায় যাচ্ছে তা বলে যায়নী আমাকে।

দারোয়ান আরিফ খান বলেন, হাসপাতালে কয়েকজন ছেলে রোগী নিয়ে আসছিলেন। ডিউটিতে থাকার কথা সাদেক খান ও তুষার। কিন্তু সাদেক খান কোথায়, তা আমি জানি না। এছাড়াও সাদেক খান নামের এই সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।তার বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের ডিউটি ফেলে বেসরকারি হাসপাতালের ডিউটি করার অভিযোগ অনেক দিন যাবত। নানান অনিয়মের কারণে তাকে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে স্থানান্তরিত করেও কোন ফল পাওয়া যায়নী। সর্বশেষ তাকে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হলেও অনিয়ম থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে গত ১৫’ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ২৫০শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা ফ্রি থাকলেও সাদেক টিকিটের দাম নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শোক দিবসে সন্ধ্যা ৬টা ২০মিনিটে আকলিমা নামে একজন রোগী থেকে সে পুলিশ কেইসের সীলের কথা বলে এক টিকিটের দাম নিয়েছেন  ৪০টাকা। এছাড়াও হাসপাতালের রোগীদের কাছ থেকে টিকিটের মূল্য ৫ টাকার স্থলে ১০টাকা ও ভর্তি ফি ১০টাকার স্থলে ২০টাকা আদায় করে করেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স সাদেক খান। তিনি এগুলোকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন।

২৫০শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক শওকত হোসেন বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে