যাশোরে এক মানবাধিকার কর্মী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক পুলিশ সুপারের (এসপি) দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেল করে আটক হয়েছেন সোমবার৷ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি জামিন পেলেও, ছাড়া পাননি তিনি৷ তাঁর বিরুদ্ধে আরো মামলা হতে পারে৷
রবিবার যাশোরে সংবাদ সম্মেলন করার পর ঐ দিন সন্ধ্যাই বিনয় কৃষ্ণ মল্লিককে নরসিংদির একটি মামলায় আটক করে নরসিংদি পাঠিয়ে দেয় যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশ৷ নরসিংদির আদালত থেকে তিনি মঙ্গলবার বিকেলে জামিন পান৷ বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস’ যশোরের নির্বাহী পরিচালক এবং প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সহ-সভাপতি। তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী পল্লবী সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এসপি এক বছর আগে একটি জমি থেকে বেশ কিছু পরিবারকে উচ্ছেদ করে৷ বিনয় কৃষ্ণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলনও করেন৷ তখন থেকেই এসপি নানাভাবে হয়রানি করছিলেন৷ ৯ মার্চ তাঁর বড় ছেলে সবুজ মল্লিককে মাদক ধরিয়ে দিয়ে আটক করে পুলিশ৷ এর প্রতিবাদে বিনয় কৃষ্ণ বরিবার সকালে এসপির দুর্নীতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন৷ ঐ দিন সন্ধ্যায় তাঁকে নরসিংদির একটি মামলায় আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ৷ আটকের সময় তাঁকে মারধোরও করা হয়৷” এ নিয়ে যশোরের এসপি মিজানুর রহমানের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ তবে যাশোর কোতয়ালী থানার ওসি ইলয়িাস হোসেন ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘তাংকে নরসিংদি পুলিশ যশোরে এসে আটক করে নিয়ে গেছে৷ আমরা তাদের সহায়তা করেছি৷ তাঁর বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা আছে৷”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ‘‘এসপি সাহেবের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে বিনয় কৃষ্ণকে আটকের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এই আটকের সঙ্গে যাশোর পুলিশ জড়িত নয়, তারা সহযোগিতা করেছে মাত্র৷”এদিকে নরসিংদির আদালতে মঙ্গলবার বিকেলে বিনয় কৃষ্ণকে হাজির করলে আদালত তাঁকে জামিন দেয়৷ নরসিংদির স্থানীয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান রিপন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রবিবার ঐ মামলাটি দায়ের করেন বাতের মোল্লা নামে এক ব্যক্তি৷ তিনি তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশ পাঠানোর নামে ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন৷ কিন্তু আদালতে অভিযোগকারী বাতেন মোল্লা বা তাঁর কোনো আইনজীবী ছিলেন না৷”
তিনি আরো জানান, ‘‘বিনয় কৃষ্ণ জানান, তিনি বাতেন মোল্লা বলে কাউকে চেনেন না৷ তবে ইরাক যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করছেন৷ তাঁদের পাওনা আদায়ে মামলাও করেছেন৷ কেউ তাকে হয়রানির জন্য এই মামলা করে থাকতে পারে৷” পল্লবী সরকার বলেন, ‘‘তাঁকে হয়রানি করার জন্য আরো কয়েক জায়গায় মামলা হতে পারে৷” বিনয় কৃষ্ণ জামিন পেলেও এখনো ছাড়া পাননি৷ জানা গেছে, তাকে আরো কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখান হতে পারে৷
বিনয় কৃষ্ণ একই সঙ্গে ‘টেলিগ্রাম’ নামে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক এবং যশোর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি৷ তাঁর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলাবার যশোরের সাংবাদিকরা বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ করেছেন৷ অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি না দিলে আগামী ১৬ মার্চ যশোরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের যশোর সফরের কর্মসূচি বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা৷ যশোরের মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট তামিদ আকাশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিনয়দাকে গ্রেপ্তারে আমরা বিস্মিত এবং হতাশ হয়েছি৷ তিনি মানবাধিকারের জন্য কাজ করেন৷ সবার বিপদে এগিয়ে যান৷ পুলিশ তাদের সঙ্গে বিরোধের কারণে তাঁকে আটক করল৷ মানবাধিকার কর্মীরই মানবাধিকার লঙ্ঘন করল৷’