জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাবের বিষয়টি এখন বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ বিষয়টি এখন আর আর্ন্তজাতিক রিপোটিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই । এটি এখন পৃথিবীর প্রতিদেশ ও প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ইস্যু ও রিপোটে পরিনত হয়েছে। এই বিষয়টি বোধ করি পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীকুলসহ সকল বস্তুর ওপর প্রভাব ফেলেছে। তাই অতীতের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব ও করণীয় বিষয়ে গনমাধ্যম কর্মীদের অনেক বেশি কাজ করতে হচ্ছে।
সরল ভাষায় যদি বলি জলবায়ু পরিবর্তনের রিপোটিং এর দুটি দিক রয়েছে। একটি নিরেট বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও তথ্য, অন্যটি এই বিষয়ে, প্রভাব, করণীয় ও বিবেচ্য বিষয়। এখানে এ বিষয়ে জাতীয় বা স্থানীয় নীতিমালা প্রনয়ন ও এর বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ বিষয়ে রিপোটিংএর জন্য এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুত করা উচিত। প্রাথমিক ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের রিপোর্ট করার আগে আমরা যে বিষয়গুলির দিকে খেয়াল রাখতে পারি-
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও নীতি মালার সাথে মিলিয়ে না ফেলাঃ আগেই বলেছি জলবাযু পরিবর্তন ও এর প্রভাবের ব্যাখা ও বিস্তারিত পেতে গেলে আমাদের বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করা সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্যও বটে। যেহেতু গবেষণার কাজ আমাদের দেশে খুব বেশী হয় না বা হলেও তার তথ্য প্রাপ্তি কঠিন তাই নিখাদ বিজ্ঞান নির্ভর রিপোর্ট করা অনেক কঠিন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়া কষ্টসাধ্য। এর পরেও যদি বৈজ্ঞিানিক তত্ত্ব ও তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করেন তাহলে মানে রাখতে হবে সেটি যেত সঠিক হয় কোন বিভ্যান্তিকর তথ্য ব্যবহার করা উচিত হবে না। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে বিজ্ঞান কেবল ঘটনা ও প্রভাব নিরুপন করতে পারে। কিন্তু এই ঘটনা মোকাবেলায় কি নীতিমালা প্রনয় করা উচিত তা বলে না। একটি নির্ভর পরে যারা নীতিমালা প্রণয় করেন তাদের ওপর। আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোবাকেলায় প্রতিনিয়ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। আমরা এসব বিষয়ে কাজ করতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যেন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও নীতিমালাকে মিলিয়ে না ফেলি।
খ. নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করাঃ জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব একটি বিশাল সেক্টর। তাই একজন রিপোর্টার হিসেবে আগেই নির্ধারন করে নিতে হবে কোন বিষয়ে রিপোর্টটি করা হবে। যে বিষয়ে রিপোর্ট করবেন সে বিষয়ে অবশ্যই পড়া লেখা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক প্রভাব, দৃশ্য মান পরিবর্তন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এবং পরিবর্তন নিয়ে আমাদের কাজ করা অনেক সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রভাব কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলি কিভাবে কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, যাদের জন্য বাস্তায়ন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তারা সুফল পাচ্ছে কিনা? তাই এই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয় গুলিকে বিবেচনায় নিয়ে রিপোর্ট করা ভালো। এতে সাংবাদিক হিসেবে যেমন ভালো রিপোর্ট করা সম্ভভ হবে তেমনি সাংবাদিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা হবে।
গ. বিশ্বাসযোগ্যতার চেক লিস্ট তৈরী করাঃ এজাতীয় রিপোটিং করা আগে অবশ্যই একটি চেক লিস্ট তৈরী করে নিতে হবে। যাতে রিপোটে কোন কিছু বাদ না যায় বা যতদুর সম্ভভ রিপোর্টটি পরিপূর্ণ ভাবে তৈরী করা যায়। খেয়াল করুনঃ ১। কার কার সাথে কথা বলঅ উচিত বা কার কার ইন্টার ভিও নেওয়া উচিত। ২। আপনি যা করছে তা কি কোন অর্থতৈরী করছে বা যাদের সাথে কথা বলছেন তারা কি আপনার চাহিদা মত তথ্য সরবরাহ করতে পারছে? ৩। খুজে বের করুন কি কি বিষয় বাদ পড়েছে? ৪। মতামত ও তথ্যকি আলাদাভাবে বর্ণিত হয়েছে না কি তালগোল পাকিয়ে গেছে।৫। প্রকাশযোগ্য সকল তথ্যের উৎসগুলি কি উল্লেখ করা হয়েছে? ৬। আপনরা রিপোর্টটের বিষয় এক তথ্য কি স্বচ্ছ না অস্বচ্ছ? সকল সময় স্বচ্ছভাবে তথ্য ও তথ্যের সূত্র উল্লেখ করা উচিত। ৭। আপনার রিপোটে কি স্বপষ্ট যে কেন এই বিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ । কেন এই রিপোর্ট করা হয়েছে? এবং কি কি বিষয়ে নজর দেয়া উচিত? এই বিষয়গুলি খেয়াল রেখে যদি রিপোর্ট করা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই আপনি একটি ভালো রিপোর্ট করতে সক্ষম হবে।
ঘ. নিজের মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকা: সকল সময় মনে রাখতে হবে একজন সাংবাদিক যখন একটি সংবাদ প্রস্তুত করেন তখন তিনি একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। কোন অবস্থাতেই নিজের মতামত দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা প্রয়শই এই ভুলটি করি, আমাদের অজান্তেই আমরা মতামত প্রকাশ করে ফেলি যা ঠিক নয়।
আবু হেনা মোস্তফা জামাল পপলু, সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টিভি।