আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর বাংলাদেশ বিষয়ে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপকে কেন্দ্র করে দু’দেশের সম্পর্কে নতুন করে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বৃহস্পতিবার পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানালেও, আগামীতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ সরকার।

নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের বিরোধিতা করে লাহোর ও করাচিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করছে জামায়াতে ইসলামি দলের সমর্থকরা। একই সঙ্গে তারা ক্ষমতাসীন মুসলিম লিগ-এন-কে এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার লাহোরে পাকিস্তানি আইনজীবীদের একটি সংগঠন নিজামীর উদ্দেশ্যে গায়বানা জানাজা নামাজের আয়োজন করে।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাজমুল হুদাকে তলব করে পাক পররাষ্ট্র দপ্তর। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানকে অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে কাজ করার জন্যই অনেককে আজ শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

পাক পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। আশা করি, কূটনৈতিক উপায়ে এ বিষয়ে সমাধান সম্ভব হবে।’

বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে, এতে কারও হস্তক্ষেপের অধিকার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে এর কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা দিনদিন ঘনীভূত হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম। রয়টার্স বলছে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক কখোনই পরিণত রূপ পায়নি। সৌদি ভিত্তিক অনলাইন সংবাদপত্র ‘আরব নিউজ’ জানায়, দু’দেশের সম্পর্কে সঙ্কট বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণের সমর্থন নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সিঙ্গাপুরের চ্যানেল নিউজ এশিয়া।

এর আগে চলতি বছরে শুরুতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে পাকিস্তানের আপত্তির জের ধরে দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহারের পর ইসলামাবাদে নিযুক্ত ঢাকার কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে প্রত্যাহার করে পাকিস্তান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে