স্টার হোটেল ও কাবাব গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানে একযোগে অভিযান হয়েছে! পহেলা বৈশাখে স্টার হোটেল রেঁস্তোরা কাবাব গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গুলো নাকি প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পান্তা-ইলিশ বিক্রি করছে!! এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনলাইনে ভ্যাট ফাঁকির অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড় প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি ছোটগুলোকে নিরুৎসাহিত করে। এনবিআর থেকে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে অগ্রাধিকার নির্দেশনা দেয়া হয়।

উপুর্যুপরি অভিযোগ ও এনবিআরের নির্দেশের প্রক্ষিতে আজ ভ্যাট গোয়েন্দার আটটি টীম শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত স্টার কাবাব ও রেস্তোরা গ্রুপের মালিকানাধীন ১১ (এগার) টি মূসক ইউনিটে ও শাখায় ব্যাপকাকারে অভিযান করেছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার নেতৃত্বে ঢাকাস্থ বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেট সমন্বয় করে গৃহীত মানব সম্পদসহ প্রায় ১৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে অংশ গ্রহণ করে। বনানী, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, এলিফ্যান্ট রোড, ওয়ারী ও ঠাটারি বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে স্টার হোটেল ও কাবাবের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কোটি কোটি টাকা ভ্যাঁট ফাঁকি দেয়ার কারণে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা যাচ্ছিল না। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগেুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনাতে বলা হয়। ভ্যাট ফাঁকিরোধে আজকের এই অভিযানও সেই প্রাত্যহিক ধারাবাহিকতায় পরিচালিত।

স্টার হোটেল ও রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অনলাইনে ও টেলিফোনে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে
– কাঁচা চালান ইস্যু করা
– ইসিআর থাকা সত্ত্বেও সেবা সরবারাহের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা
– বড় ধরনের পার্সেলের ক্ষেত্রে কোন চালান ব্যবহার না করা
– নিজস্ব প্যাডে হাতে লেখা বিল প্রদান করা এবং
– মূল্য তালিকায় ভ্যাট অন্তর্ভূক্ত/বহির্ভূত উল্লেখ না থাকা।
কাঁচা চালানের অসংখ্য ছবিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোক্তা অনলাইনে অভিযোগ করেছেন।

অভিযানকালে ভ্যাট গোয়েন্দার সদস্যরা উল্লিখিত অভিযোগগুলোর সত্যতা পান। এ ছাড়া,
– এলিফ্যান্ট রোডস্থ স্টার হোটেল ও রেস্টুরেন্টের বেশ কিছু কাঁচা চালান ইস্যুর প্রমাণসহ ভ্যাট গোয়েন্দারা হাতে নাতে ম্যানেজারকে ধরে ফেলেন। পানির পুরনো বোতলের আবর্জনার স্তুপের মধ্য পরিত্যক্ত চালানের কপি পাওয়া যায়।
– সাত মসজিদ রোড শাখার স্টার কাবাব ও বেকারী একই ভ্যাট রেজি: নম্বরের অধীনে দুটো ননফিসক্যাল ইসিআর মেশিন ব্যবহার করছে।
– একইভাবে ঠাটারি বাজার, ধানমন্ডি, বনানী, কাওরান বাজার শাখায় ব্যাপকহারে সাদা স্লিপ ও নিজস্ব সিরিয়াল বিহীন কাঁচাচালান ইস্যু করছে।

এতে প্রতিদিন সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্যাট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে নিয়ে আসেন । জব্দকৃত দলিলাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফাঁকিকৃত ভ্যাট উদঘাটন পূর্বক মামলা দায়ের করা হবে।

ভ্যাট গোয়েন্দার কার্যক্রম সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও সংবাদ ধারনের জন্যে এ সময় মাছরাঙা, সময়, একুশে টিভি, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ, ইটিভি ও একাত্তর টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত থেকে সহায়তা দিয়েছেন।

ভ্যাট ফাঁকির বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দার এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। ঢাকা শহরসহ সারা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একইভাবে ভ্যাট ফাঁকির অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ ক্ষেত্রে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতনতার জন্য ভ্যাটের চালান হিসেবে ইসিআর পিওএস চালান গ্রহনের জন্য এবং ভোক্তাদের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে দেয়া ভ্যাট যেন যথাযথভাবে সরকারী কোষাগারে জমা হয় সেটা নিশ্চিতকরণসহ ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরকে সহায়তা করার জন্য এবং ভ্যাট ফাঁকির কোন অভিযোগ থাকলে www.facebook.com.vat intelligence/bd এ জানানোর জন্য অনুরোধ করা হল।

গত ছয় মাসে ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তর প্রায় সত্তরটি ভ্যাট ফাঁকির অভিযান পরিচালনা করেছে। এ সকল অভিযানে ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়। রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের জন্য ভ্যাট ফাঁকি প্রতিরোধে গোয়েন্দারা সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে