মশিউর আনন্দ।। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র সামোয়ার রাজধানী আপিয়ায় ২১-২৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ২৭তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন বা Commonwealth Heads of Government Meeting (CHOGM-2024) -এ পরারষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মো. ইউনুসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আধুনিক কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে আয়োজিত এ সম্মেলন বৈশ্বিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
কমনওয়েলথ এর সভাপতি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস ২৫ অক্টোবর ২০২৪-এ “One Resilient Common Future: Transforming our Common Wealth” শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া ছাড়াও ২৫ অক্টোবর তিনি Executive Session এ যোগ দেন। এছাড়াও, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৬ অক্টোবরে সরকার প্রধানদের Retreat-এ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক স্বৈরাচারী সরকার পরিবর্তনের পটভূমি এবং পরিবর্তন আনয়নে তরুণ প্রজন্মের ত্যাগ ও অবদেন তুলে ধরে টেকসই ভবিষ্যত গড়ার নিমিত্তে কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন তরুণদের অধিকতর সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিংগা সমস্যা সমাধানে কমনওয়েলথ নেতাদের একসাথে কাজ করার আহবান জানান।
সম্মেলনে কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের নেতারা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে অলোচনা করার পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নিজেদের মধ্যে অধিকতর যোগাযোগ, বাণিজ্য এবং টেকসই ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Youth Forum, Business Forum, Commonwealth Ministerial Meeting on Small Islands এবং Pre-CHOGM Foreign Ministers Meetings- এ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সরকার প্রধানদের সম্মানে বৃটেনের মহামান্য রাজার নৈশভোজ ছাড়াও একাধিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেন।
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে এবার মোট ৩৭টি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় যার একটি বাংলাদেশ ও সামোয়া যৌথভাবে আয়োজন করে। “Climate Vulnerability and Resilient Youth: Towards a Net Zero Future” শীর্ষক এ সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সামোয়ার মহিলা ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। উক্ত সাইড ইভেন্টে নামিবিয়া, জ্যামাইকা ও মালদ্বীপের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং মাল্টার পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও ৬০ জনেরও অধিক প্রতিনিধি যোগদান করেন। এ ইভেন্টে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এছাড়াও,বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে।
শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বাগদিক সামোয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এছাড়াও, তিনি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকসমূহে তিনি দেশগূলোর সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সকল বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ হতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান মামলা কার্যক্রমের বিষয় জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যয়ের কথাও তুলে ধরেন।
সামোয়ায় কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে ফেরার পথে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। মত বিনিময় সভার পূর্বে নিউজিল্যান্ডের সিনেটর ফিল টোয়াইফোর্ড পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।